কোভিড-১৯ প্রতিরোধে নিজের তৈরি করা বিধি ভঙ্গ করে সহকর্মীর মুখে চুমু খাওয়ার ছবি প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন বৃটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। তার ওই সহকর্মীকে রক্ষিতা বলে আখ্যা দিয়েছে বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম। সিসিটিভিতে ধরা পড়া মন্ত্রীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশের পর থেকে বৃটেনের রাজনীতিতে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় দিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ওপর চাপ বাড়িয়ে ছিলেন বিরোধীরা। এমনকি ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকেও চাপ আসছিলো। উত্তর নরফ্লোকের এমপি ডানকান ব্যাকার খোলাখুলিভাবেই হ্যানকককে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ অবস্থায় অনুশোচনা থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তা গ্রহণ করেছেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
উল্লেখ্য, ছবি প্রকাশের পরপরই হ্যানকক সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বিষয়ক নিজের নির্দেশনা অমান্য করার জন্য জনগণের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। সে সময় প্রধানমন্ত্রী তার দুঃখ প্রকাশকে আমলে নেন এবং তার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে জানিয়ে বিষয়টির এখানেই নিষ্পত্তি চান। বৃটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান শুক্রবার ‘ওয়ার্ল্ড এক্সক্লুসিভ’ হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী হ্যানকক এবং সহকারী হিসেবে কাজ করা গিনা কোলাড অ্যাঞ্জেলোর অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ করে।
পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে নানা অঙ্গভঙ্গিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চুমু খাওয়ার ছবিটির সঙ্গে এ সংক্রান্ত চারটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। বৃটিশ গণমাধ্যমে গিনাকে হ্যানককের ‘উপপত্নী’ বলে উল্লেখ করছে। ট্যাবলয়েডটির প্রথম পৃষ্ঠা হ্যানককময় হওয়ার বিষয়টি বিশ্বমিডিয়াও পিক করে। বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলোআপ স্টোরি ছাপা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস হ্যানককের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছে, ক্লোজ ডোরে সামাজিক দূরত্ব মানার বিধি ভাঙার জন্য মন্ত্রী জনগণের কাছে ক্ষমা চাইলেও বিবাহবহির্ভূত ওই সম্পর্কের বিষয়টি গোগন করার জন্য স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। দ্য সানের রিপোর্টে বলা হয়, হ্যানকক ও কোলাড অ্যাঞ্জেলো দুজনই বিবাহিত। তাদের তিনটি করে সন্তান রয়েছে। তাদের অন্তরঙ্গ ছবি গত ৬ই মে স্বাস্থ্য বিভাগের ভেতরেই তোলা হয়। দ্য সান, বিবিসিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মনোরঞ্জনের বিষয়টি যতটা গুরুত্ব পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ফোকাস পেয়েছে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে অথর্ব সহকারী গিনা কোলাড অ্যাঞ্জেলোকে নিয়োগের বিষয়টি। বলা হচ্ছে, ম্যাট হ্যানককের একক সিদ্ধান্তেই ওই নিয়োগ হয়। শুধু তাই নয়, মিলিয়নিয়ারের বউ গিনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা বা সহকারী হিসেবে নিয়োগের পর তার স্বামীর কোম্পানি অনেক টাকার কাজ পেয়েছে, কোভিড সংক্রান্ত অ্যাপ তৈরিতে মোটা অঙ্কের অর্থ চার্জ করেছে। ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর হ্যানককের স্ত্রীকে একবার প্রকাশ্যে দেখা যায়। সে সময় তার হাতে বিয়ের আংটি ছিল বলে জানিয়েছে দ্য সান। এ সময় তার মুখে হাসিও দেখা যায়।
বৃটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টি এবং দেশটির গণমাধ্যম হ্যানককের পিছু নিয়েছে শক্তভাবে। লেবার পার্টির পক্ষ থেকে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি হ্যানকককে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। তার অবস্থানকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছে লেবার পার্টি। তবে ডাউনিং স্ট্রিট বলছে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হ্যানকককে ক্ষমা করেছেন এবং বিষয়টি এখানেই শেষ ভাবতে বলেছেন। ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেন, দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতারাও বলছেন, বৃটেনে বিধিনিষেধ চললেও কাজের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে নেই। তবে সরকারের পরামর্শ হচ্ছে, যেখানে সম্ভব মানুষ যেন দুই মিটার বা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখে। পাশাপাশি দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানতে হবে বা মাস্ক পরতে হবে। হ্যানকক এটা মানতে না পারার জন্য যখন দুঃখ প্রকাশ করেছেন তখন এ নিয়ে আর কথা না বাড়াতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু লেবার পার্টির চেয়ারম্যান অ্যানেলিস ডডস তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, হ্যানকক নিজেই নিয়ম তৈরি করেছেন। তিনি তা ভাঙার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাকে পদ ছাড়তে হবে। তিনি যদি পদত্যাগ না করেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর তাকে বরখাস্ত করা উচিত। লেবার পার্টির একজন মুখপাত্র বলেন, সরকার এটাকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। বিবিসি বলছে, সরকার মনে করে, এই ঘটনায় কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। কারণ, হ্যানকক ও তার সহকারী দুজনই দপ্তরে বৈধ কাজের জন্য গিয়েছিলেন। দেশটির লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকেও হ্যানকককে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তার বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্ব রাখার বিষয়টি নিয়ে ভণ্ডামির অভিযোগ তোলা হয়।









