মুজিবনগরে মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘ইতিহাস কথা কও’

‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদেরই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।’ দেশাত্মবোধক এই সংগীতের মধ্য দিয়ে মুজিবনগরে মঞ্চস্থ হলো নাটক ‘ইতিহাস কথা কও’। মুজিবনগর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এই মঞ্চ নাটক।

গানের সুরে বলতে লাগলো, আরে শোনেন শোনেন ভাই-বন্ধুরা, শোনেন মনও দিয়া, চেঁচা-মেচি ক্ষান্ত দিয়া শোনেন চুপটি করিয়া। বেশি কথা কওয়া ভাইরে মোটেও ভালো নই। খালি কলসির শব্দ বেশি সর্ব লোকে কয়। এই বেশি কথায় বাঙালিরে খাইলোরে গিলিয়া। একের কথা কহেন তারা দশজনে মিলিয়া। আজ যে আমি করে যাচ্ছি বেশি মাতা মাতি, ধরে নেবেন আপনি আমি একই বংশজাতি।

এর পরেই একএক করে উঠে আসে ব্রিটিশ বেনিয়াগুষ্টির ২০০ বছরের চরম অত্যাচার ও রাজ্য দখলের কাহিনী গানের সুরে। তারা বলতে থাকে ভারতবর্ষ দখল-ধন সম্পদ লুট, হত্যার কথা। এই সময়ে সংগঠিত হওয়া আন্দোলনের কথা। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগ ও ১৯৪৮ সালের জিন্নার সরকারেরি উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হওয়ার ঘটনাও।

মঞ্চজুড়ে একাত্তরের সাধারণ মানুষের দাবি উঠে আসে। বেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকন্ঠের ভাষণ। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

এছাড়াও ছিলো ২৫ মার্চের রাতের ভয়াল বর্ণনা। মায়ের কোলে ছেলে যেমন ঘুমায় তেমনি বাঙ্গালী শান্তিতে ঘুমায় ছিলো বাংলা মায়ের কোলে। এমন সময় পাকসেনাদের অতর্কিত হামলা ও অত্যাচারের কথা।

নাটক প্রায় শেষের দিকে উঠে আসে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা আমরা তোমাদের ভুলবো না এমন গান বলতেই পাশে থেকে একজন পাগল বেশে এসে তাদের গান থামিয়ে দিলো এবং বলতে লাগলো কি কইতাছোস তোরা, ইতিহাস পইরা তারপরে কোষ। শুনছোস সেই মির্জাফরের কথা। যারা বাংলার সন্তান হইয়া বাংলার মা বোনের উপর অত্যাচারে সাহায্য করছিলো। আপন ভাই রক্তে হাত দুইটা লাল করছে। মায়ের সোনার টুকরা ছেলেদের আগুনে ফেলাইছে। কইছোস তোরা সেই রাজাকারদের কথা। আমি যানি তোরা কইতা পারবি না।তোদের বুকে সাহস নাই।এই বলতে বলতে পাগল আবার চলে গেলো। আর শেষ হলো মঞ্চায়িত নাটক ‘ইতিহাস কথা কও’।

সোমবার বিকালে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে দারিয়াপুর নটরাজ গ্রুপ থিয়েটারের মিউজিক পরিবেশনায় স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে উপরিউক্ত অভিনয়ের মাধ্যমে এ নাটক পরিবেশনা করেন উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ।

অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষার্থী রিতু, প্রাপ্ত, প্রিয়া, প্রান্ত, দীপ্ত। এছাড়া সকল শিক্ষার্থীরা নাটক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার, মোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেনসহ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ, হাজারো দর্শক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।