আগামীতেও বৃহত্তর পরিসরে বই মেলা আয়োজনে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন

১৪ গুণী ব্যক্তিকে একুশে স্মারক সম্মাননা প্রদান করলেন চসিক

ভাষা সৈনিক,মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক, চিকিৎসক,শিক্ষাবিদ, সংগীত শিল্পী, পেশাজীবী, সাংবাদিকতাসহ চৌদ্দটি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য চট্টগ্রামের চৌদ্দ গুণী ব্যক্তিকে একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও একুশে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন । আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামস্থ জিমনেসিয়াম চত্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত ও সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত বই মেলা মঞ্চে সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি ও তাদের পবিবারের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন। অমর একুশে বই মেলা চট্টগ্রাম-২০১৯ এর আহবায়ক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় চসিক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী,চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া বক্তব্য রাখেন। সংবর্ধিত ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরিন আখতার, প্রকৌশলী আলী আশরাফ, সাফিয়া গাজী রহমান, মানজুর মুহাম্মদ, মোস্তফা কামাল, মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, মরহুম আইয়ুব বাচ্চুর পিতা হাজী মোহাম্মদ ইসহাক, দবির আহমদ চৌধুরীর এর পুত্র আবদুর রহমান চৌধুরী অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা এই আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামীতে আরো বৃহত্তর পরিসরে আয়োজনে তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বই মেলা মঞ্চে সংবর্ধিত গুণীজন,চসিক কাউন্সিলর,সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন নগরীর গুনীজনদের সংবর্ধনা প্রদান ও তাদের অবদনের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে হাজারো গুণীজন সৃষ্ঠি হবে। চট্গ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করার অংগীকার ব্যক্ত করে মেয়র বলেন যেসব দেশের প্রধান ভাষা একাধিক,সেখানে কোনো একটি ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা ঘোষনা করা মানে সেই ভাষায় কথা বলা মানুষকে অন্যদের চেয়ে বেশী সুযোগ প্রদান করা,অন্য ভাষার মানুষের উপর কর্তৃত্ব করাতে রাস্ট্রীয় সমর্থন যোগানো। এর ফলে একাধিক ভাষাভাষির মধ্যে সংঘাত সৃস্টি হয়। এই প্রসংগে মেয়র বলেন ভাষা রাজনীতি যে জাতি ও রাস্ট্রকে বিভক্ত করতে পারে উর্দু নিয়ে তৎকালিন পাকিস্তানী রাজনীতি এর একটি উজ্জল উদাহরণ। তাই আমাদের উপর উর্র্দূ চাপিয়ে দেয়ার পরিনতি ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা। বই মেলা আয়োজনের কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন অতীতে চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে একাধিক বই মেলা আয়োজনের কারনে এখানে কোনো বই মেলাই কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ ও পাঠক সমাজ দীর্ঘদিন থেকে দাবী জানিয়ে আসছিল চট্টগ্রামে ঢাকার আদলে একক বই মেলার আয়োজন করার। এই বাস্তবতা উপলব্ধি থেকে একটি গ্রহনযোগ্য ও সম্মিলিত বই মেলা আয়োজনের জন্য আমি বিভিন্নভাবে প্রকাশক, নাগরিক সমাজ, লেখক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবদিক, শিক্ষক, গবেষক ও সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের সাথে আলোচনা করি। তাই এবারের আয়োজন ভিন্ন আঙ্গিকে হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে আমরা সফল হয়েছি। জিমনেসিয়ামের সামনের রাস্তা সহ সম্প্রসারন করে আরো বৃহত্তর পরিসরে কলবরে আগামী বছরও ১০ই ফেব্রুয়ারি এই মঞ্চে ১৯ দিনব্যাপী এই বই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এইজন্য তিনি চট্টগ্রামের সকল নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস। এই ভাষা আমার মায়ের এবং আমার মুখের ভাষা। এই ভাষাকে সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে এই দিনটি পালিত হচ্ছে। এই ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচিতি ও সমৃদ্ধ করার জন্য বেশি বেশি লেখনির উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন লেখনির মাধ্যমে এই ভাষা যতই সমৃদ্ধ হবে। ততই দেশ ও জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে অধিকতর সমাদৃত হবে। আমারা সমৃদ্ধ ও মানসম্মত লেখার বই চাই। যে লেখায় পাঠকের মনের চাহিদা পুরন করবে। তিনি বলেন ৭১এ বঙ্গবন্ধুর আহবানে আমরা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়। অনুরূপভাবে আমরা আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি।

এর আগে চট্টগ্রামের ভাষা সৈনিক,মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক, চিকিৎসক,শিক্ষাবিদ, সংগীত শিল্পী, পেশাজীবীদের সম্মাননা প্রদানের জন্য ১০ ফের্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই ১৪জনের নাম ঘোষনা করে। এর মধ্যে একুশে সম্মাননা পদক পেয়েছে ১০ গুণী ব্যক্তি এবং সাহিত্য ক্ষেত্রে পেয়েছেন ৪জন । এবার চসিক কর্তৃক পদকপ্রাপ্ত হলেন ভাষা সৈনিক,মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক, চিকিৎসক,শিক্ষাবিদ, সংগীত শিল্পী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, কবি ও লেখকও রয়েছেন।এ একুশে স্মারক সম্মাননা পাওয়া চৌদ্দ জনের মধ্যে ভাষা আন্দোলনে দবির আহমদ চৌধুরী(মরনোত্তার), মুক্তিযুদ্ধে(মরনোত্তার) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ আবদুর রব (মরনোত্তার), সঙ্গীতে আইয়ুব বাচ্চু (মরনোত্তার) এর পক্ষে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহন করেন । এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডা. এস এম কামাল উদ্দীন, ক্রীড়ায় কামাল উদ্দীন আহমেদ, শিক্ষায় প্রফেসর (প্রকৌশলী) আলী আশরাফ, সমাজ সেবায় সাফিয়া গাজী রহমান, সংগঠক হিসেবে মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, সাংবাদিকতায় মোস্তফা কামাল পাশা এবং সাহিত্যে গবেষনায় পুরস্কার পেয়েছেন ড.শিরীন আখতার, কথাসাহিত্যে দেবাশীষ ভট্টচার্য্য, শিশু সাহিত্যে মানজুর মুহাম্মদ ও কবিতায় খালেদ হামিদী। তারা নিজেরাই মেয়রের নিকট থেকে ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন।

এদিকে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৯ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে চসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ বেদীতে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরনে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বৃহষ্পতিবার সকাল ৮ টা ১ মিনিটে নগর ভবনস্থ বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। এই সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র,কাউন্সিলর,সংরক্ষিত কাউন্সিলর,চসিক প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামশুদ্দোহা,ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু শাহেদ চৌধুরী,প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়াসহ বিভাগীয় শাখা প্রধানগন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া চসিক শ্রমিক-কর্মচারী লীগ(সিবিএ)এবং ওয়ার্ড সচিব ফোরাম নেতৃবৃন্দরা চসিক নগর ভবনস্থ বঙ্গবন্ধু চত্বরে প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অপর্ন করেন।