চট্টগ্রামের কৃতি ছাত্র আয়ারল্যান্ডের পরিবেশ বিজ্ঞানী

কুতুবদিয়ার সন্তান এবং চট্টগ্রামের দেবপাহাড়ে বেড়ে ওঠা রিজভী বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের সরকারি প্রতিষ্ঠান আইরিশ কৃষি এবং খাদ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।

রিজভীর কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো ডেইরি শিল্পের বর্জ্য পদার্থকে পরিবেশ উপযোগী প্রক্রিয়ায় কৃষিকাজে ব্যবহারযোগ্য জৈবসারে রূপান্তরিত করা।

চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করেছেন ড. আশেকুজ্জামান রিজভী। গবেষণা করছেন আয়ারল্যান্ডের পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রে, ডেইরি প্রসেসিং টেকনোলজি সেন্টার (ডিপিটিসি) প্রোগ্রামে।

আশেকুজ্জামান রিজভী বলেন, একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসেবে তার গবেষণাকাজের মধ্যে আরও রয়েছে- দূষিত পানির পরিশোধন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, খাওয়ার পানি থেকে স্বল্প খরচে আর্সেনিক দূরীকরণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পরিবেশ দূষণ রোধের উদ্দেশ্যে শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও জৈব বর্জ্যকে পরিবেশ উপযোগী করে পুনঃব্যবহার প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন।

যেমন জৈব বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন। ইতিমধ্যে তার অর্জনও কম নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া রিজভী বুয়েট থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে ডেনিশ স্টেট স্কলারশিপ নিয়ে ডেনমার্কে আলবর্গ ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করেন।

এই সময়ে ‘ডানিডা রিসার্চ ট্রাভেল গ্রান্ড’ও অর্জন করেন গবেষণা কার্জক্রমের জন্য। এরপর পিএইচডি গবেষণা কাজের জন্য যুক্তরাজ্যে গল্গাসগো ক্যালেডনিয়ান ইউনিভার্সিটিতে যান এবং পরে ‘Stander Mobility Scholarship ও International Adsorption Society Conference Grant-USA অর্জন করেন।

আশেকুজ্জামান রিজভী জানান, বাংলাদেশের আর্সেনিক দূষিত টিউবওয়েলের পানিকে স্বল্প খরচে বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি অর্জন করেন সম্মানজনক The Royal Society of Edinburgh, Scotland’ রিসার্চ গ্রান্ড। ইতিমধ্যে তার ১০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

কীভাবে সফল হলেন? এই প্রশ্নের জবাবে কুতুবদিয়ার ছৈয়দুর রহমান এবং বেগম আলতাফুন্নেসার সন্তান রিজভী বলেন, ‘নিষ্ঠা, অনুপ্রেরণা, সঠিক পরিকল্পনা এবং সহিষুষ্ণতার সমন্বয় আমাকে এই অবস্থানে আসতে সাহায্য করেছে।’

বর্তমানে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পরিবেশ সংক্রান্ত নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমসাময়িক সমস্যাগুলোকে মাথায় রেখেই রিজভী এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার এবং সায়েন্টিস্ট হওয়ার অনুপ্রেরণা পান। রিজভী মনে করেন তার গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে।

তার ভাষায়, ‘পেশাগত বিবেচনায় আমি স্বপ্ন দেখি, আজ থেকে ২৫ বছর পর চট্টগ্রামসহ সারাদেশে হবে পরিকল্পিত নগরায়নের দেশ। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সহায়ক পুনঃব্যবহার (রিসাইক্লিং) এবং কৃষিকাজে প্রাধান্য পাবে জৈব সারের ব্যবহার’। সে ক্ষেত্রে তিনি তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান।