চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে আবুধাবি বিমানে ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে আবুধাবি যেতে বাংলাদেশ বিমানের বিজনেস শ্রেণিতে ভাড়া উঠেছে এক লাখ ৩৯ হাজার টাকা। আসা-যাওয়া নয়; শুধু ঢাকা-আবুধাবি যাওয়ার এই ভাড়া সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আসা ও যাওয়া মিলিয়ে এই রুটের ভাড়া ইকোনমি শ্রেণিতে ৪০ হাজার টাকা; এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার টাকা, তা-ও শুধু যাওর ভাড়া। কভিড-১৯ মহামারিতে যাত্রী চাহিদার তুলনায় টিকিটের সংখ্যা একেবারে নগণ্য হওয়ায় ভাড়া আকাশ ছুঁয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই দামে টিকিট বিক্রি হলেও বুধবার থেকে এই দামেও টিকিট মিলছে না। এতে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি চট্টগ্রাম বিমান বাংলাদেশের জেলা অফিসে ভিড় জমিয়েছেন। টিকিট না পেয়ে ভাঙচুর করেছেন, অনেক প্রবাসী হতাশা নিয়ে ফেরত গেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আবুধাবি প্রবাসী আবু বকর বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ছুটিতে দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েছিলাম। আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে আমাকে আবুধাবিতে ঢুকতেই হবে; তা না হলে চাকরিতে ব্যাপক জটিলতায় পড়ে যাব। আমার ফিরতি টিকিট ক্রয় করা ছিল। গত মঙ্গলবার বিকেলে বিমান ওয়েবসাইটে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি দেখানো হচ্ছিল। আর ২৬ আগস্টের টিকিটের বিক্রি হয়ে যাওয়া ভাড়া এক লাখ ছয় হাজার টাকা। রাতে সেটি দেখানো হয় এক লাখ ৩৯ হাজার টাকা। ভাড়া দেখে তো চোখ আমার ছানাবড়া।

পরে আমার কাছে থাকা টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করতে বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বিমান অফিসে গেলে দেখি শত শত প্রবাসীর ভিড়। পরে জানতে পারি, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আবুধাবির কোনো টিকিট নেই বিমানের। এখন বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়লাম- যোগ করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কদিন ধরেই চট্টগ্রাম বিমান অফিসে আবুধাবি ও দুবাই রুটে টিকিটের জন্য ভিড় ছিল। বুধবার সকালে সেটি চরম আকার ধারণ করে। শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি তাঁদের টিকিট কেনার জন্য; আবার অনেকেই তাদের টিকিটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য ভিড় জমান। টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসের জানালা ভাঙচুর করেন, পরে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিমান অফিসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ নিয়োগ করা হয়।

এত বেশি বাড়ার বিষয়ে জানতে অসংখ্যবার ফোন করা হলে অফিশিয়াল নম্বরটি কৌশলে ব্যস্ত রেখেছেন চট্টগ্রাম জেলা বিমান অফিসের ম্যানেজার আকতারুজ্জামান। পরে বাংলাদেশ বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দুবাই-আবুধাবি রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া ভাড়া বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগ ভালো বলতে পারবে। তারা তথ্য দিলে আমি বলতে পারব।

জানা গেছে, কভিড-১৯ মহামারিতে আটকে পড়া প্রবাসীদের জন্য প্রথম ফ্লাইট চালু করে বাংলাদেশ বিমান। গত জুলাই থেকেই অনিয়মিতভাবে ফ্লাইট চালু হয়। পরে সেটি আবার নিয়মিত করা হয়। এখন সপ্তাহে চারটি আবুধাবি ও চারটি দুবাই ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান। তবে কোনো ফ্লাইট চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি যাচ্ছে না; সব ফ্লাইট ঢাকা থেকেই যাচ্ছে। তবে চট্টগ্রামের যাত্রীদের চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে।

এদিকে হাজার হাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা প্রবাসীর জন্য সপ্তাহে আটটি ফ্লাইট খুবই সামান্য। যদিও গত মঙ্গলবার থেকে ফ্লাই দুবাই ঢাকা থেকে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চট্টগ্রামের অধিবাসীর সংখ্যা সবচে বেশি। ফলে চট্টগ্রাম থেকে পৃথক এবং প্রতিদিন ফ্লাইট শুরু করাটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, করোনার কারণে অন্তত ৪০ হাজার প্রবাসী আটকা পড়েছেন দেশে। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ; তাই নিজের সম্পদ বিক্রি করে দ্রুত নিজ প্রবাস কর্মস্থলে ফিরতে চাইছেন। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাড়তি ফ্লাইট এবং চট্টগ্রাম থেকে পৃথক ফ্লাইট চালু না করাটা খুবই অমানবিক হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-দুবাই রুটে স্বাভাবিক সময়ে আসা ও যাওয়ার ভাড়া ৪০ হাজার টাকা। এখন সেই ভাড়া ইকোনমি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা; তা-ও শুধু যাওয়ার ভাড়া। আর বিজনেস ক্লাসের ভাড়া সর্বোচ্চ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ৯৫ থেকে এক লাখ ৩২ হাজার টাকা। প্রবাসীদের জন্য ভাড়া নাগালের মধ্যে রাখাও জরুরি।

উল্লেখ্য, কভিড-১৯ মহামারির সময় আবুধাবি ও দুবাই রুটে এত দিন একচেটিয়া ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ বিমান। তবে গত সপ্তাহ থেকে এয়ার অ্যারাবিয়া সপ্তাহে দুদিন ঢাকা-আবুধাবি, সপ্তাহে চার দিন ঢাকা-শারজাহ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ ছাড়া ফ্লাই দুবাই সপ্তাহে দুদিন ঢাকা-দুবাই ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কালের কণ্ঠ