পেকুয়ার পাহাড়ে চাচা ভাতিজার রাম-রাজত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাহাড়ি অঞ্চল হিসাবে খ্যাত বারবাকিয়া এবং টইটং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পাহাড়ি জমি ও বসতবাড়ি জবর দখল, চুরি, ছিনতাই, হানাহানি ও লুঠপাটের মত ঘটনা ঘটেই চলছে।
এসব ঘটনায় রাম-রাজত্ব দেখিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে বহু মামলার আসামী পাহাড়িখালী এলাকার জাফর আলম, তার পুত্র মোঃ আলমগীর, ভাই মোঃ জাবের তার ছেলে আশেকসহ একদল দূর্বৃত্ত। তাদের এমন অপকর্মে প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন বারবাকিয়া ইউপির ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।
গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে বলে অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।
ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এছাড়াও আমার পার্শ্ববর্তী সীমান্ত এলাকা টইটং ইউপির লাইনের সিরা এলাকার মানুষের সুঃখ দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে পাহাড়ি এলাকায় জাফর আলম, তার ভাই জাবের, ছেলে আলমগীর, জাবেরের ছেলে আশেক ও মেয়ের জামাই মিলে পাহাড়ি এলাকায় চুরি, ছিনতাই, হানাহানি ও দখল বেদখলে মেতে ওঠে। তারা আমার পিতা, চাচা ও ভাই হলেও এলাকার নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধি ইউপি সদস্য হিসাবে তাদের এ সমস্ত অপকর্ম ও দখল বেদখলের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা আমাকে সব সময় অবগত করেন এবং লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়াও টইটং রমিজ পাড়াস্থ লাইনের সিরা এলাকার নুরুল ইসলামের দখলীয় ১৬খানি জমি জবর দখল করে নেন তারা। বারবাকিয়া পুটুবিলা এলাকার বিধবা মহিলা মাবিয়ার জমি জবর দখল করে ঘর তৈরি করেন। এ সমস্ত অপকর্ম ও অপরাধের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তাদের বউ ও মেয়েদের নির্যাতন করা হয়। গরু ছাগল নিয়ে বিক্রি করে দেন। সব সময় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে চলাফেরা করায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। এসব ঘটনা আমাকে স্থানীয়রা অবগত করলে তাদের এসমস্ত অপকর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার বারণ করি। এছাড়াও আলমগীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বিয়ে করেছে। তারা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু না পাওয়ায় আমার বরাবর বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা ছিল। এ সমস্ত অভিযোগ সত্য বলে প্রতিয়মান হওয়ায় তাদেরকে অপরাধ কর্মকান্ড থেকে সরিয়ে আসার জন্য বলি। এটা বলায় তারা আমার প্রতি চরমভাবে ক্ষিপ্ত ছিল।
সর্বশেষ ঘটনার কয়েকদিন আগে ডাকাত জাবের-আলমগীর ও জাফরের নেতৃত্বে আমার ক্রয়কৃত জমি জবর দখল করে বালুর মেশিন বসিয়ে দেন। মেশিন বসালেও আমি বাধা দেয়নি। শুধু বলেছি জমির চারপার্শ্বে দেয়া বাধ যেন ঠিক থাকে। এটা বলার সাথে সাথে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বন্দুক ও কিরিচ নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়। আমাকে আহত করার পাশাপাশি আমার জমিতে দেয়া সমস্ত বাধ তারা কেটে দেন। এমনকি আমাকে মারধর করার বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলে অথবা মামলা করলে প্রাণে হত্যা করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি আমি তাৎক্ষনিকভাবে পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত)মিজানুর রহমান সাহেবকে অবগত করি।
তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকমাস আগে আলমগীরের অপরাধ কর্মকান্ডে এলাকাবাসীরা অতিষ্ট হলে এবং তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকলে পুলিশের হাতে তুলে দিই। জেল থেকে বের হয়ে পিতা জাফর আলম, চাচা জাবের, জাবেরের ছেলে আশেক ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য সংঘবদ্ধ বাহিনী গঠন করে। তারা সবসময় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে অপকর্ম করে চলেন। বর্তামানে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্যে আমাকে প্রাণে হত্যা করা। আমি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি দ্রুত এ সমস্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হউক।
স্থানীয় বারবাকিয়া ও টইটংয়ের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডাকাত আলমগীর খুব খারাপ প্রকৃতির লোক। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বাড়িতে ডুকে লুঠপাটসহ মহিলাদের উপর নির্যাতন করা হয়। বর্তামানে তার সাথে যোগ দিয়েছেন ডাকাত পিতা জাফর আলম ও চাচা জাবেরসহ একদল অস্ত্রধারী। তারা চুরি, ছিনতাই, দখল বেদখল ও লুঠপাটে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। এমনকি দীর্ঘদিনের বসতবাড়ি জবর দখল ও গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়া তাদের নিত্যব্যাপার। যার তার জমিতে বালুর মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা তাদের জন্য নিত্যব্যাপার। তাদের বিরুদ্ধে অহরহ মামলা ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থাকলেও দূর্গম এলাকা হওয়ায় পুলিশও সহজে কিছু করতে পারেনা। তারা যেভাবে চলাফেরা করেন যেকোন মূহুর্তে খুনের মত ঘটনা ঘটাইতে পারে।
স্থানীয়দের দাবী এ সমস্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে পাহাড়ি এলাকার আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হতে পারে।