ইউনুস মিয়া, দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রাস::
আমাদের পরিচয় মাছে-ভাতে বাঙালি। কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন, ‘ভাত-মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙালি সকল/ ধানে ভরা ভূমি তাই মাছ ভরা জল।’ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বাঙালির পাতে আর বেশি দিন মাছ দেখা যাবে না। কেননা, মাছবিষয়ক তিনটি সংস্থার গবেষণার তথ্য অনুযায়ী হালদাসহ দেশের নদনদীতে পুঁটি, ট্যাংরাসহ ৯১ প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। আর এ জন্য অনেকাংশে দায়ী মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কিছু কর্মকাণ্ড।





এভাবে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া আমাদের জন্য অশনিসংকেত। কারণ, আমাদের আমিষের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরণ হয় মাছ থেকে। গ্রামীণ মানুষের আয়-রোজগারের একটি বড় উৎস হচ্ছে মাছ। মাছ রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে। তাই মাছের উৎপাদন যে করেই হোক বাড়াতে হবে। কোনো মাছকেই বিলুপ্ত হতে দেয়া যাবে না।
এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের অবস্থান আমাদের দেশেই। সেটা হচ্ছে চট্টগ্রামের হালদা নদী। জাতীয় অর্থনীতিতে হালদার অবদান বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাবার ড্যাম ও স্লুইস গেইটনির্মাণ, দূষণ, নাব্যতা কমে যাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। হালদা নদীসহ দেশের সব নদ-নদী, হাওর, বাঁওড়, পুকুর ও অন্যান্য জলাভূমিকে মাছের প্রজনন উপযোগী করতে হবে।
মাছ নিয়ে গবেষণারতদের মতে, সরকার ইলিশ রক্ষায় যেভাবে অভয়াশ্রম ঘোষণা ও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ করা ইত্যাদি উদ্যোগ নিয়েছে, দেশি প্রজাতির মাছকেও রক্ষা করতে একই ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরাও গবেষকদের মতের সঙ্গে একমত। দেশি মাছ রক্ষায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সরকারিভাবে যেসব মাছ ছাড়া হয়, সেখানে দেশীয় মাছকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেই সঙ্গে নদীর দূষণ ও দখল বন্ধ করতে জনসাধারণের সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ জাগাতে হবে। মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।