কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া প্রতিনি ধি।
করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় দেশের প্রথম রেড জোন ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন শুরু হয়েছে উখিয়ায়। মঙ্গলবার অবরুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিলেন কঠোর অবস্থানে। এর ফলে যে কোনো ধরনের পরিবহন, মার্কেট, দোকান ও বিপণিবিতান বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনের নির্দেশনা থাকায় সবাই তা মেনে চলেছেন।
গত রোববার কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক মোনায়েম খাঁন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কক্সবাজারের আরেক সিনিয়র সাংবাদিক আনছার হোছেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ছয় দিন পরও কোনো প্রকার চিকিৎসা ও প্রশাসনের কেউ খোঁজ খবর না নেয়ায় ফেসবুক লাইভে এসে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। উখিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য মোহাম্মদ নুরুল হক করোনায় সংক্রমিত হয়ে ১১ দিন পর্যন্ত নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে নেয়া হয়েছে। তার পরিবার সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে রোহিঙ্গারা। টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট পেয়ে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকেও পালিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাসহ সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মে প্রথম একজন রোহিঙ্গার করোনা শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ৩৪ জন রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে একজন। রোহিঙ্গাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তারা তা গোপন রেখে ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে সেবন করছে। আশ্রয় শিবিরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর এ বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা। যেহেতু প্রতিটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকে রোহিঙ্গারা। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রসস্থ ও বড় পরিসরে কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করেছিল। বিলাসী জীবন-যাপনকারী কিছু এনজিও প্রতিনিধি ও পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের ইন্ধনে ভাসানচরে যেতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা। উখিয়া টেকনাফে স্থাপিত আশ্রয় ক্যাম্পে ১০ বর্গফুটের কোনো কোনো ঝুপড়িতে গাদাগাদি করে ১০-১২ জনও থাকে।
কুতুপালং বিশাল ক্যাম্পে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানছে না কেউ। ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও তা গোপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ক্যাম্পে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধ রাখতে বলা হলেও রোহিঙ্গারা শুনছে না সরকারের দেয়া নিয়ম-নীতি। প্রশাসনের পক্ষে লাখ লাখ মানুষের মধ্যে কার জ্বর-কাশি বা কার সর্দি হয়েছে, এসব খবর নেয়াও সম্ভব না। এ কারণে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। ৩৪টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সেবায় এক হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ক্যাম্পের ভিতর ২০০ বেডের একটি আধুনিক হাসপাতাল হয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেনা বাহিনীর সদস্যরাও নজরদারি বাড়িয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, দেশে মহামারি চলছে এটা সবাই অবগত রয়েছে। করোনা নিয়ে সারা বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন। তবে কিছু সংখ্যক এনজিও তা মানছেনা মোটেও। মাইক্রোবাসে কমপক্ষে ৮-১০ জন করে কর্মী ক্যাম্পে যাওয়া-আসা করছে প্রতিদিন। এসব এনজিওতে কর্মরত চাকুরীজীবিরা লক ডাউন বা রেড জোন মানছে না। ক্যাম্পে কর্মরত কমপক্ষে ১০-১২ জন এনজিওকর্মীর রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে।
উখিয়ার ক্যাম্প-২ (পূর্ব) এর রোহিঙ্গা নেতা মোঃ নূর বলেন, ক্যাম্পের করোনা আক্রান্ত এক রোহিঙ্গা যুবক আইসোলেশন সেন্টার থেকে পালিয়ে গেছেন। তাকে খোঁজা হচ্ছে। তিনি হয়ত ক্যাম্পেই লুকিয়ে রয়েছে। ক্যাম্প-১ এর আরো একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলছে না।










