শফিউল আলম, রাউজান ঃচট্টগ্রাম ৬ রাউজানে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীর সাথে টেক্কা দিতে চায় জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাচ্ছেন এলাকবাসীরা। তবে আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত নির্বাচন গুলো বাদ দিলে আসনটি সব সময়ই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যা ১৯৭০ সাল ও ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক খালেদ বিজয়ী হন। ১৯৭৯ সালে এ এম জহিরউদ্দীন খান ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হয়ে বিএনপিকে এ আসনে প্রথম সাফল্য এনে দেন। ঐ নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে সঙ্গে তীব্র লড়াই হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে সাবেক ছাত্রনেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু জাতীয় পার্টি হতে নাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয় অর্জন করেন।
পরবর্তী ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিজয়ী হন। রাউজানের সাবেক সাংসদ শহীদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী তিনি ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে (রাঙ্গুনিয়া) আসনে প্রথমবার নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাউজান থেকে ধানের শীষ প্রতীকে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত ২০০১ সালে ও ২০০৯ সাল ২০১৪ সাল ২০১৮, ২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমানে কারাগারে আটক এবি এম ফজলে করিম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় । এর অর্থ ছিল বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়।
তবে এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে (ধানের শীষ প্রতীক) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি এলাকায় হেভিওয়েট প্রার্থী বলে বিবেচিত হচ্ছে ভোটারদের কাছে। তিনি বলেন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আমি ব্যাক্তি গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরীকে মনোনয়ন দেননি, জাতীয়তাবাদী দল মনোনয়ন দিয়েছে অত্র এলাকার শতশত বছরের ত্যাগি কর্মিদেরকে, যারা সতের বছর ধরে বাড়িতে যেতে পারেনি, মৃত্যু মা বাবার বিদায় বেলার চেহারা দেখতে আর জানাজা পড়তে পারেনি, এলাকায় আসাতে দেয়নি বাড়ি ভিটা ছাড়া ছিল তাদের মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি বলেন আমার দলের প্রতি কৃতজ্ঞ, তিনি আমার রাউজানের নেতা কর্মিদের স্বিকৃতি দিয়েছেন। এক কাতারে আনতে আমি দলের প্রত্যেক নেতাকর্মি সবাইকে সাথে নিয়ে একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম তৈরি করে রাউজানের জনগনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করব, আমি আমার জীবনের সব কিছুর বিনিময়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। রাউজানের জাতীয়বাদী দলের সকল মানুষ আমার পরিবারের সদস্য, আমার রাউজানের জনগণকে শান্তিতে রাখা আমার প্রধান দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। সন্ত্রাস নৈরাজ্য, মাদক আর নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পূঃণ প্রতিষ্ঠা করে রাউজানের মানুষের অধিকার স্থাপন করব। অভাব দারিদ্র মুক্ত রাউজান গড়ার লক্ষ্যে, রাউজানে জনগণের হারানো অধিকার ফিরিয়ে একটি সমৃদ্ধশীল আর দখলদারিত্ব মুক্ত রাউজান গড়তে একনিষ্ঠ কাজ করে যাব।
এদিকে জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে (দাঁড়ি পাল্লা প্রতীক) শাহজাহান মঞ্জু মনোনয় দেওয়া হয়েছে। তিনিও এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। এলাকাবাসীদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাচ্ছেন এলাকাবাসীরা। তিনি বলেন- রাউজান নাম শুনে অনেকে ভয়পান সে ভয়ের রাউজানকে সাহস আর নির্ভিক বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, অন্যায় অপরাধ, জুলুম অত্যাচার মুক্ত রাউজান করা, রাউজানকে একটি আধুনিক ইসলামী আদর্শের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে মানবিক সেবক হিসেবে কাজ করে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় অধিকার, দারিদ্র মুক্ত রাউজান প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাব।
এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে অধ্যক্ষ আল্লামা ইলিয়াস নুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে (মোমবাতি প্রতীক) দলীয় মনোনয়ন পাওয়া অধ্যক্ষ আল্লামা ইলিয়াস নুরী বলেন- চট্টগ্রামের বীরপ্রশবীনি রাউজান মহান ব্যক্তিদের পূর্ণভূমি, প্রিয়নবী (সাঃ) কোরআন সুন্নার মতাদর্শের ভিত্তিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত, সকল ধর্মিয় স্থাপনা ও সংস্কৃতি রক্ষার পাশাপাশি অন্যায়, অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধ করা। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে আমার কর্মি বাহিনী যেভাবে সকল মতাদর্শকে সম্মান দিয়ে রাউজানে মানবিক কাজ করেছিল এমন মানবিক কাজ অব্যহত রাখবো, এবং মাদক মুক্ত সুন্দর ও শান্তি প্রতিষ্ঠাই রাউজানের জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাব।
গণসংহতি আন্দোলন থেকে (মাথাল প্রতীক) নাসির উদ্দীন তালুকদার বলেন, জুলাই পরবর্তী জনগণের আকাঙ্ক্ষা, একটি বৈষম্যহীন, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ রাউজান গড়ে তোলাই আমাদের রাজনীতির লক্ষ্য। আমাদের প্রতীক ‘মাথাল’। এটি রাউজানের তথা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সংগ্রাম ও ঐক্যের প্রতীক। সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই। চলুন, আমরা একসাথে রাউজানকে নতুন পথে এগিয়ে নি শান্তি, ন্যায় ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে চেয়ার প্রতীকে অধ্যাপক কাজী মুহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, আমি রাউজানের সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এবং সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সহাবস্থান নিশ্চিত করে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শান্তির রাউজান নিশ্চিত করা। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে রাউজান থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, মাদক মুক্ত রাউজান বিনির্মাণ করা, সাম্প্রতিক কালে রাউজানে সন্ত্রাস, হত্যা ও মাদকের যে অভয়ারণ্য হয়েছে দ্রুত রাউজানবাসীকে সে অভিশাপ থেকে মুক্ত করা, ধনী ও দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য দূর করা, শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রয়াসে কাজ করা এবং নারী শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখা সর্বোপরি আমার প্রিয় রাউজান সমগ্র বাংলাদেশে শান্তির মডেল রাউজানে পরিণত করা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এন.সি.পি) (শাপলা কলি) প্রতীক নিয়ে এ আসনের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন নিয়েছেন মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জিলানী।
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে (হাত পাখা) প্রতীক নিয়ে মাওলানা জিয়াউর রহমান। তবে নির্বাচনী তফসির ঘোষণার পর একাধিক নতুন প্রার্থীর বিস্তারিত তথ্য যানা যাবে।
রাউজানের স্থানীয় এক শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন- রাউজানের জনগণ সুখেশান্তিতে বেঁচে থাকতে চায়, দীর্ঘ দিন খাঁছায় বন্দী পাখি হঠাৎ মুক্তি পেলে যেভাবে পাখ নাচিয়ে উড়ে, ঠিক দীর্ঘদিন রাউজানে একতন্ত্রী পরিবেশ পরিবর্তনে এমন আন্দন উৎস করছে চলছে রাউজানে। আমরা এমন একজন নেতা চাই যিনি আল্লাহর ভয় নিয়ে জনগণের শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সন্ত্রাস নৈরাজ্য দাফন করতে পারবেন। তবে রাউজানের সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো গুলির শব্দ কানে ভাসে, নির্বাচন পরবর্তী রাউজানের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় রাউজানের অধিকাংশ মানুষ। গত ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশীল ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশনার। ঘোষিত তপশীলে আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী সংসদ নিবাচন অনুষ্টানের তারিখ ঘোষণা করা হয়। তপশীল ঘোষনার পর থেকে রাউজানে সঙসদ সদস্য প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়েছে। বিভিন্ন এলঅকায় প্রার্থী ও তাদের নেতা কর্মীরা গনসংযোগ প্রচরনায় নেমে পড়েছে।











