সুদানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তীব্র অপুষ্টি ও খাদ্যসংকটে গত এক মাসে অন্তত ২৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে দেশের সেনাবাহিনী ও জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বে থাকা আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে চলমান তীব্র লড়াইয়ের কারণে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে। কর্দোফান অঞ্চলে এ মানবিক বিপর্যয় ঘটছে বলে জানিয়েছে ।

সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, ২০ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ কর্দোফানের অবরুদ্ধ শহর কাদুগলি ও দিল্লিং–এ এসব শিশু মারা গেছে। তীব্র অপুষ্টি, ওষুধের সংকট এবং আরএসএফ আরোপিত অবরোধের কারণে খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী প্রবেশে বাধার জন্য এসব মৃত্যু হয়েছে।
কাদুগলি শহরে নভেম্বর মাসের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। মাসের পর মাস আরএসএফ এ শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখায় হাজারো মানুষ জীবন–মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
জাতিসংঘ জানায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সেনাবাহিনী ও আরএসফ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে—যদিও বাস্তব সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে মানবিক সংস্থাগুলো। যুদ্ধের কারণে ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দেশজুড়ে মহামারি ও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তীব্র হয়েছে।
আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকদের হিসাব অনুযায়ী, কর্দোফান ও দারফুরে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষে পড়েছে এবং আরও ৩৬ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ–পূর্ব অবস্থায় আছে।
সুদানে এখন যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তার শুরুটা হয়েছিল ২০১৯ সালে তিন দশক ধরে প্রেসিডেন্ট থাকা ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে। ১৯৮৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুদানের ক্ষমতায় আসা ওমর আল-বশিরকে পদ থেকে সরাতে ২০১৯ সালে সুদানে ব্যাপক হারে বিক্ষোভ হয়। এর ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পতন ঘটায়।
দেশের ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। তবে সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। বিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সরকার প্রতিষ্ঠা হয়, কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে আরেকটি অভ্যুত্থানে ওই সরকারও ক্ষমতাচ্যুত হয়।
ওই অভ্যুত্থানের পেছনে মূলত যে দুইজন ব্যক্তি ছিলেন, তারাই সুদানে চলমান সংঘাতের পেছনে রয়েছেন। এরা হলেন- জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। জেনারেল আল-বুরহান সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং সে কারণে তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট।
সূত্র : দ্য আরব নিউজ











