বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের একই দিনে গণভোট আয়োজনের সরকারি সিদ্ধান্ত জনগণের রক্তঝরা গণআন্দোলনকে অবজ্ঞা করার শামিল। তিনি সরকারকে গণদাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ২টায় আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ উত্তর গেইটে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত ৫ দফা গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা আমরা নতুন করে দেখতে পাচ্ছি। প্রিয় দেশবাসী জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে ঘোষণা করে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়া হয়েছে ।মৌলিক সংস্কারকে গুরুত্বহীন করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রিক উত্তরনসহ জনআকাংখার বাংলাদেশ গঠনের পথ সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে ।মানুষ সচেতন, বিশেষ করে বাংলার তারুণ্য, জুলাই বিপ্লবের যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা সকল খোঁজ খবর রাখে, এই যড়যন্ত্র সম্পর্কে তারা অবহিত রয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস সাহেব কে কতিপয় উপদেষ্টারা আজকে বিভ্রান্ত করে দেশক নতুন সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন আজকে উপদেষ্টা পরিষদের জন্ম জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে হয়েছে, যারা আজকে উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পালন করছেন তারা জুলাই বিপ্লবের হাজারো শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ জুলাই গণভোটের জন্য তাদের নিকট কোনো বাজেট নেই যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশের মানুষ একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন চাই না। বাংলাদেশের মানুষ জুলাইয়ের যে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, এই গণঅভ্যুত্থান শতভাগ মর্যাদা দিতে চাই। আর এই গণঅভ্যুত্থান কে যদি শতভাগ মর্যাদা দিতে হয়, জাতীয় নির্বাচনের সাথে গণ ভোটকে ঘুলিয়ে ফেলার কোন সুযোগ নেই, আমরা একইদিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন মানি না মানবো না।
মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে। অন্যতায় দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সরকার যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজপথে জনগণ নামতে বাধ্য হবে। তখন কেউ দমাতে পারবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন, নাগরিক অধিকার পুনরুদ্ধার এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ৫ দফা দাবি সময়ের অনিবার্য প্রয়োজন। গণভোটসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রিয় সিদ্ধান্ত জনগণের সাথে আলোচনা ছাড়া গ্রহণ করা হলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও নগর সেক্রেটারি ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের পরিচালনায় উক্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ১০ আসেনর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এস এম লুৎফুর রহমান, চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শফিউল আলম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আজ আমরা এক জটিল সময়ের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। দেশের ভবিষ্যৎ, জনগণের ভোটাধিকার, রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তি – সবকিছুই আজ গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের ভিত্তিতে সমাধান একটাই জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে হবে
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ আস্থাহীনতার চরম সীমায় পৌঁছেছে। ইন্টেরিম সরকারের আচরণে বারবার প্রমাণ হয়েছে তারা একটি বিশেষ দলের সন্তুষ্টি অর্জনে তৎপর, তাদের এই আচরণ দেশকে গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কারো কথায় নয়, জনগণের পালস বুঝে বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও গণজাগরণের মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্তের অধিকার ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। আমরা সংঘাত চাই না, আমরা সহিংসতা চাই না আমরা চাই জনগণের অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সমাধান।
উক্ত সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম ৯ আসেনর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. এ কে এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. আবু নাছের, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোছাইন প্রমুখ।
বিক্ষোভ মিছিলে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে আসা নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ অংশ নেন। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলটি আন্দরকিল্লা এলাকা প্রদক্ষিণ করে চকবাজার অলি খাঁ মোড় সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।









