শফিউল আলম, রাউজানঃ চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের টিম।
৯ অক্টোবর সোমবার ভোররাতে এই অভিযান শুরু হয়। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় চাঞ্চল্যকর আব্দুল হাকিম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলভার, ১টি চায়না রাইফেল, ১টি শর্টগান, ৪৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি(৭.৬২), ১৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি (৭.৬৫), ৭টি ম্যাগজিন, ২টি দেশীয় রামদা, ১টি রকেট ফ্লেয়ার, ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৫০ গ্রাম গাঁজা (আনুমানিক) এবং ৯৬,০০০ নগদ টাকাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকার আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ির সোবহান প্রকাশ শহর মুল্লুকের পুত্র মোঃ শাহেদ ও একই এলাকার মৃত মোঃ শওকতের পুত্র মোঃ সাকিব।
সোমবার ভোররাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিম হত্যা মামলার দুই আসামীতে গ্রেফতারের পর তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার অভিযান শেষে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ব্রীজের কাছে চাঞ্চল্যকর হাকিম হত্যার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
গত ৭ অক্টোবর সংঘটিত ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম হত্যার পর হত্যা মামলার সূত্র ধরে ৬ জন আসামি গ্রেফতারের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্যানুসারে জানা গেছে,চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম সানতু র দিক-নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।গত ৭ অক্টোবর ঘটনার দিন সকালে নিহত আব্দুল হাকিম নিজ প্রাইভেটকারযোগে রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের তারই মালিকানাধীন হামিম এগ্রো ফার্মে যান। বিকেলে এগ্রো ফার্ম থেকেচট্টগ্রাম শহরে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে আসা অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ অক্টোবর রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মোঃ আব্দুল্লাহ খোকন (প্রকাশ ল্যাংড়া খোকন)-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে হাকিম হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।খোকনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২ নভেম্বর রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোঃ মারুফ-কে গ্রেফতার করা হয়। মারুফের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের অবস্থান জানা যায়, যা মোঃ সাকলাইন হোসেনের হেফাজতে ছিল। পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর রাতে হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ সাকলাইন হোসেনকে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।পুলিশ রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ, জিয়া, ও সাকলাইনের দেয়া তথ্যমতে ৯ নভেম্বর রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়িতে জেলা পুলিশের একটি টিম অভিযানে নামে।আসামিদের জবানবন্দি ও স্থানীয়সুত্রে জানা যায়, রাউজান থানাধীন বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাকিম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।এ পর্যন্ত পুলিশী অভিযানে হাকিম হত্যা মামলার ৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয় এবং হাকিম হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ বাকি আসামিদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।এ পর্যন্ত হাকিম হত্যা মামলায়গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, রাউজানের ১৪ নং বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের গরীব উল্লাহ পাড়ার সলিমুল্লাহর পুত্র মো:আব্দুল্লাহ খোকন প্র:লেংড়া খোকন, রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া কুজি আলীর বাড়ির মো: হারুনের পুত্র মো: মারুফ, রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাচখাইন গ্রামের হাজী দলিল উর রহমানের পুত্র জিয়াউর রহমান, রাউজানের ১৩ নং নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মোকার দিঘীর পাড় পালোয়ান পাড়ার সালেহ ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ীর মোঃ ইকবাল হোসেনের পুত্র মোঃ সাকলাইন হোসেন,রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকার আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ির সোবহান প্রকাশ শহর মুল্লুকের পুত্র মোঃ শাহেদ ও একই এলাকার মৃত মোঃ শওকতের পুত্র মোঃ সাকিব।চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, চট্টগ্রাম জেলা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,অপরাধ দমনে নোয়াপাড়া, চৌধুরীহাট ও আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন, পুলিশি টহল, বিশেষ অভিযান এবং রাত্রীকালীন সাঁড়াশি তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।











