চট্টগ্রাম নগরের আসকার দীঘির উত্তর পাড় এলাকায় পাহাড় কেটে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে নগরের এস এস খালেদ রোডে সিডিএ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, ‘স্বপ্নীল ফ্যামিলি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি বেসরকারি আবাসন কোম্পনি সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ করছে। ১২৭ ফুট উঁচু পাহাড়টির ভবন নির্মাণের অংশ ক্রয়সূত্রে মালিকানায় আছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী, খোকন ধর, হিমেল দাশ, সুভাষ নাথ, রনজিত কুমার দে, রূপক সেনগুপ্তসহ ৯২ জন। ২০১৯ সালে কেনার পর ২০২৩ সালে সিডিএ’র ইমারত নির্মাণ কমিটির কাছ থেকে তিনটি বেজমেন্ট ও ১৪ তলাসহ মোট ১৭ তলা ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়।
অভিযোগ আছে, টিন দিয়ে উঁচু প্রাচীর তুলে পাহাড়টিকে দৃষ্টির আড়ালে নেওয়া হয়। এরপর সেটি ধীরে ধীরে প্রায় কেটে ফেলা হয়। সিডিএ ৩০ কাঠার জমিতে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ জায়গা খালি রেখে ভবন নির্মাণের শর্ত দিয়েছিল। পাশাপাশি পাহাড়ের কোনও ক্ষতি না করে স্থাপনা নির্মাণের শর্ত ছিল অনুমোদনে। কিন্তু সিডিএ’র এসব শর্ত না মেনে টিনের বেস্টনি দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে পাহাড় কাটে ভবন মালিক। পাশাপাশি শর্ত না মেনে পুরো জায়গাজুড়ে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বেজমেন্টসহ ভবনের ছয়তলা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
এ অবস্থায় সিডিএ তাদের ভবন নির্মাণ বন্ধ রাখার আদেশ দিলে এর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভবন মালিকরা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। হাইকোর্ট সিডিএর আদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলে তারা কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। সিডিএ চেম্বার জজ আদালতে আপিল করে। আপিল বিভাগ রোববার (২০ এপ্রিল) শুনানি শেষে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, স্বপ্নের ফ্যামিলি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সমিতি এ ভবনটি নির্মাণ করছে। পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি করায় সিডিএ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তারা এ নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। ২০ এপ্রিল তাদের আবেদন খারিজ করে দিলে সোমবার (২১ এপ্রিল) অভিযানে এসেছি। ভবন ভাঙার কাজ চলছে।
এর আগে, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ৯২ জনের নামে জমিটির নামজারি হয়। সিডিএতে জমা দেওয়া নথিতে দেখা যায়, জমিটি বাড়ি হিসেবে লিপিবদ্ধ। অথচ ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এবং ২০১০ সালের সংশোধিত আইন অনুসারে এটি পাহাড়। আর এই আইন অনুসারে পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।