শফিউল আলম, রাউজানঃ চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ১৩ নং নোয়াপাড়া ইউনিয়নের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সামমাহালদার পাড়া-মোকামীপাড়া-ছামিদর কোয়াং সংযোগ সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাকোঁ দিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যার পানির শ্রোতে ঘুর্নিঝড় চলাকালে কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীর জোয়ারের পানির শ্রোতে বিধস্ত হয়ে যায়। এতেই যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে ওই গ্রামে। পরে ভেঙে পড়া সড়কে এলাকার লোকজন একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপারে ছোট-বড় সকলেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী নিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার লোকজন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সড়ক দিয়ে সাত গ্রামের অসংখ্য মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। গ্রামের মানুষ চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অতিদ্রুত সময়ে সড়কটি মেরামত করে সাধারণ মানুষের পথচলা সুগম করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন এলাকার বাসিন্দ্বারা ।

জানা গেছে, ভারী বৃষ্টির মধ্যে কর্ণফূলী ও হালদার জোয়ারের পানির তোড়ে গত ৬মাস মাস আগে এলজিইডির তালিকাভুক্ত সড়কের একটি স্থানে প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ভেঙে জমির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলো। সড়কটির স্থানে স্থানে আরও অন্তত ২০০ মিটার অংশেও একই অবস্থা হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় সড়কটি দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। গত ছয়মাস গাছের গুড়ি এবং বাঁশের সাঁকো বানিয়ে ছমিদর কোয়াং, মোকামী পাড়া, পশ্চিম নোয়াপাড়া, কচুখাইন, সামমাহদর পাড়া সহ সাত গ্রামের ১০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে চলাচল করলেও সড়ক সংস্কার করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বা স্থানীয় দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ফলে ওই গ্রামের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ এলাকার নারী শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে আসা যাওয়া করছে ২টি বাঁশের সাঁকো দিয়েই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর বর্ষা এলেই পাঁচ থেকে সাতবার ভাঙে দুই কিলোমিটার এই সড়কটি। যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতিবছরই এলাকার কিছু তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটি সংস্কার করেন তারা। অন্তত ১০ বছর ধরে এভাবে চলে আসছে গ্রামবাসির উদ্যোগে সড়ক সংস্কার।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কটির যে ৪০০ মিটার ধসে পড়েছে, তা মোকামীপাড়া অংশে। এর মধ্যে সড়কটির সামমাহালদার পাড়া, ছামিদর কোয়াং তিন গ্রামের আর পাঁচটি স্থানে সড়ক ধসে একেবারে পাশের জমির সঙ্গে মিশে গেছে, সড়কের কোনো অস্তিত্বই নেই বলেই চলে।
বর্ষায় ভারি বৃষ্টি হলে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি ৬ থেকে ৮ ফুট বেড়ে যায়। এ সময় স্রোতের তোড়ে সড়কটির বেহাল দশা হয়। সড়কটি আরও ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু করে দু’পাশে নিরাপত্তা দেয়াল দেওয়ার দাবি জানান গ্রামবাসী।
মোকামীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের এই সড়ক দিয়ে প্রায় সাত গ্রামের ১০ হাজার মানুষের চলাচল করেন। এলাকাবাসী সড়কটি টেকসই করে নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভাঙা সড়কের কারণে গ্রামবাসীকে বছরের প্রায় ছয় মাস অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়।
৬ বছর ধরে সড়কটি সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীদের একজন স্থানীয় তরুণ রহিম বলেন, তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন তরুণ চাঁদা তুলে সড়কটি বারবার মেরামত করে আসছেন। তবে গ্রামটি নদী তীরবর্তী হওয়ায় বর্ষায় প্রায়ই নদীর পানি ঢুকে পড়ে সড়কটি ভেঙে যায়। নদীর তীরে বেড়িবাঁধ থাকলে এ সমস্যা থাকত না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, আমরা বন্যার পর সড়কটি পরিদর্শন করেছি। এটি আরসিসি ঢালাই এবং নিরাপত্তাদেয়াল নির্মাণের জন্য এলজিইডির সদর দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ করা হবে বলে তিনি জানান।









