জসিম উদ্দিন মনছুরি
বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। দেশে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। শহরের অলিতে গলিতে অসংখ্য দরিদ্র মানুষের দেখা মেলে। এসব বাস্তুহারা মানুষগুলি জীবন জীবিকার তাগিদে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। তারা পেশা হিসেবে বেঁচে নেয় ভিক্ষাবৃত্তিকে। শহরের মোড়ে মোড়ে অসংখ্য ভিক্ষুকের দেখা মিলে। ভিক্ষুকের সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে বিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত থাকেন। কিছু কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। পঙ্গু , বয়স্ক ,অপ্রাপ্তবয়স্ক ভিক্ষুকও চোখে পড়ার মতো । একজনকে দয়াবশত ভিক্ষা দিতে গেলে জটলা পাকিয়ে ভিক্ষুকরা দাতার কাছ থেকে ভিক্ষা আদায় করার জন্য জোরজবরদস্তি করে। গ্রামেগঞ্জেও ভিক্ষুকের অভাব নেই। সহজ পেশা হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে সহজে গ্রহণ করে নিম্ন আয়ের মানুষগুলি। দেশে কত সংখ্যক ভিক্ষুক রয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও তারা ভিক্ষাবৃত্তিকে সহজ পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।
অনেকের পারিবারিক পেশা কারণে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেঁচে নেয়। পুঁজি ছাড়া ব্যবসা হওয়ায় তারা ভিক্ষাবৃত্তিতে উৎসাহ বোধ করে। প্রতিদিন ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এভাবে ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে দেশের মান ক্ষুন্ন হবে। অনেকে পেশাগত কারণে ভিক্ষাবৃত্তিকে পছন্দসই পেশা হিসেবে সানন্দে গ্রহণ করে। এমন কিছু বিক্ষুক রয়েছে যাদের রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ভিক্ষাবৃত্তি করে তারা অনেক সম্পদ জমিয়েছেন বলে খবর চাউর হয়েছে। তারা একজনের সাথে আরেকজন দ্বন্দ্ব লাগলে একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে। তখন থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। জানা যায় অমুক ভিক্ষুকের এত এত সম্পত্তি রয়েছে । শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তিকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করছে। অনেকে আবার প্রতারণার মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছেন। সুস্থ সবল মানুষ হওয়া সত্বেও ব্যান্ডেজ বেঁধে কিংবা কুটা হয়ে হাঁটার অভিনয় করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নাম লেখায়। কিছু বয়স্ক মানুষ রয়েছে তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ বয়স্ক লোকদেরকে সরকার অনেকদিন ধরে বয়স্ক ভাতা দিয়ে আসছে। বয়স্ক ভাতা পাওয়া সত্ত্বেও তারা সহজ পেশা হিসেবে অবসরে ভিক্ষাবৃত্তিকে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দিন থেকে দিন অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভিক্ষাবৃত্তিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করতে পারলে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা অনেকটা কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনকল্পে কতিপয় প্রস্তাবনা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো –
১. বিক্ষুক শুমারি করতে হবে।
২. যারা একেবারে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ তাদেরকে ভিক্ষুক কার্ড প্রদান করতে হবে।
৩. ভিক্ষুকদের যথাযথ পুনর্বাসন করতে হবে।
৪. ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে কঠিন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৫. শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা প্রতারণার মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি করে তাদেরকে কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬. ভিক্ষুকদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করতে তাদেরকে কিছু পুঁজি দিয়ে ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে যুক্ত করতে হবে।
৭. ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম পত্রিকা, টিভি ও রেডিওতে প্রচার করতে হবে।
৮. নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত যত্রতত্র ভিক্ষাবৃত্তি করা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দিতে হবে।
সর্বোপরি ভিক্ষাবৃত্তিকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হলে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছে তাদেরকে সরকারিভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে তারা রাস্তাঘাটে পড়ে না থেকে নিজেদের উন্নয়নে কাজ করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অহরহ জায়গা থাকায় প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ভিক্ষাবৃত্তি অনেকটা কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। এমনকি ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে কঠিন আইন প্রণয়ন করতে হবে।