রোজাদারদের পাতে ইফতার বেড়ে দিচ্ছেন চট্টগ্রামের মেয়র, পথচারীদের ডেকে বসাচ্ছেন একসাথে ইফতার করার জন্য। সোমবার এভাবেই সাধারণ রোজাদারদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ করলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।![](https://priyochattogram.com/wp-content/uploads/2023/04/Screenshot_13-2.jpg)
![](https://priyochattogram.com/wp-content/uploads/2023/04/Screenshot_13-2.jpg)
লালদীঘিস্থ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে মাসব্যাপি এ ইফতারের আয়োজনের মাধ্যমে চসিক মেয়র রেজাউল ইসলামের সুমহান ভ্রাতৃত্বের বার্তাকে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন চট্টলাবাসীর কাছে। এদিন প্রায় পাঁচশ সাধারণ নাগরিক চসিক মেয়রের সাথে ইফতার গ্রহণ করে তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেন। মেয়রকে নগরী নিয়ে নানান অভাব-অভিযোগ আর পরামর্শ দেন ইফতারিতে আসা জনগণ। অনেকে প্রশংসা করেন সাধারণ নাগরিকদের জন্য ইফতারের আয়োজন করায়।
মহতী এ উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, নগরীর প্রাণকেন্দ্র লালদীঘিতে সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে গৃহহীন, এতিম ও হতদরিদ্ররা যাতে ইফতার নিয়ে বিড়ম্বনায় না পড়ে তার জন্য পুরো রমজান মাসজুড়ে বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করেছি । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিলাসী ইফতার পার্টির পরিবর্তে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে রোজার শিক্ষাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে হাজারো মানুষের হাতে ইফতার সামগ্রী ও সেহেরি পৌঁছে দিয়েছি এবং ঈদেও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকব। সমাজের বিত্তবান শ্রেণিকেও বলব আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা রোজাদারদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে।
মেয়রের এ উদ্যোগে এবারের রমজান মাসে সোমবার পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ইফতার করেছেন। প্রতিদিন বিকালে মাহবুব উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায় শত শত মানুষ একসাথে ইফতার সারছেন। তাদের মাঝে আছেন পথচারী, রিকশাওয়ালা, শিক্ষার্থী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ সবা বয়সের নানা পেশার প্রান্তিক মানুষেরা। শ্রেণি, পেশার ভেদাভেদ ভুলে সারিবদ্ধভাবে বসেছেন ইফতার করতে।
আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, মেয়রের এই মানবিক উদ্যোগ বাস্তবায়নে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই প্রতিদিন রোজাদারদের সেবা দিচ্ছেন। চারজন বাবুর্চিকে সাথে নিয়ে ইফতার পরিবেশন করে তবেই তারা ঘরে ফেরেন। ইফতারের পরিচিত আয়োজন শরবত ছোলা-মুড়ি, পেয়াজু, বেগুনি আবার কখনো বিরানী অথবা খিচুরি দিয়ে বৈচিত্র্যের স্বাদ দেয়ার চেষ্টাও আছে এ আয়োজনে।
সোমবার ইফতারে আসা নির্মাণশ্রমিক বাবুল মিয়া সাথে আলাপ হলো। জানালেন পরিবার থাকে সেই সুদূর ময়মনসিংহে। জীবিকার খোঁজে চট্টগ্রাম এসেছেন, কাজ করেন বাড়ি নির্মাণের শ্রমিক হিসাবে। সারাদিন পরিশ্রম করার পর এখানে আসেন বিনামূল্যে ইফতার করতে। মেয়রের সাথে ইফতার করতে পেরে উচ্ছসিত বাবুল মিয়া জানালেন, মেয়র ইফতার বেড়ে দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবকরাও সহযোগিতা করছেন। এমন আন্তরিক পরিবেশ পেয়ে তিনি আনন্দিত।
ইফতারিতে অংশ নেয়া জাহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলো। তিনি বললেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর এখন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। সারদিন লাইব্রেরিতে পড়ার পর এখানে ইফতার আর নামাজ সেরে টিউশনিতে ফিরি। মেয়রকে পেয়ে অনেক ভালো লাগল। নির্বাচিত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা জনগণকে ভুলে যান এমন সবসময় শুনতাম। মেয়র রেজাউলকে দেখে সে ভুল ভাঙলো। উনি ইফতারও করালেন আবার এলাকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মানুষের সাথে পরামর্শও করলেন। এমন মেয়র পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
এভাবেই প্রতিদিন রোজাদাররা তৃপ্তি নিয়ে ইফতার করছেন মেয়রের এ উদ্যোগের ফলে। তারা চান সমাজের প্রতিটি স্তরে মানবিকতার এ বার্তা পৌঁছে যাক। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হয়ে উঠুক মানবতারও নগরী।