ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশকালে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এতে সংগঠনটির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বাঁশ ও লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত দু’জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামও রয়েছেন। প্রায় একই সময় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকাল তিনটায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটির নেতারা ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত কর্মসূচি শুরুর অনেক আগে থেকেই ক্যাম্পাসের প্রতিটি পয়েন্টে ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নিতে থাকেন। শহীদ মিনার, টিএসসি, ভিসি চত্বর সিনেটসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ভিসির কার্যালয়ে যান। সে সময় তার সঙ্গে থাকা কয়েকশ’ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পরবর্তীতে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে ফের মোড়ে মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে বিকাল চারটার পর নিজেদের কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে নীলক্ষেত মোড়ে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এ সময় ফুলের তোড়া হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করতে চাই। এর বাইরে আমাদের আর কোনো পরিকল্পনা নেই। তারপর বেলা সাড়ে চারটার দিকে সংগঠনের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সিনেট ভবনের দিকে আগাতে শুরু করেন। মিছিলটি কিছুদূর যেতে না যেতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এফ রহমান হলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে প্রথমে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাতে লাভ হয়নি। কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রদলের ওপর আক্রমণ করে বসে। এতে সংগঠনটির কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে পালাতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়া ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগ। হামলায় আহত হয়েছেন ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান আরিফ ও রাজু আহমেদসহ আরও বেশ কয়েকজন। রক্তাক্ত এক ছাত্রদল নেতা এ সময় চলে যেতে যেতে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়কে ফুল দিতে এসেছিলাম।
ফুল দিতে যাওয়ার সময় বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আহত ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি রীতি অনুযায়ী ভিসি ও প্রক্টরকে ফুল দিয়ে বরণ করে ও সৌজন্য সাক্ষাৎ করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের নবগঠিত কমিটি ভিসি ও প্রক্টরের অনুমতি সাপেক্ষে বেলা চারটায় গণতন্ত্র ও মুক্তি’র সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ভিসি কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মিছিলটি এফ আর হলের সামনে যেতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সামনেই আমাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর মাথা ফেটে যায়, লাঠির আঘাতে হাত ভাঙে আরও অনেকের। হামলার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দর কষাকষিতে ব্যস্ত ছিল, কোনো ধরনের হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেটা ছাত্রদলের দু’পক্ষের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলাফল। ছাত্রলীগ সংঘাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডক্টর গোলাম রাব্বানী মানবজমিনকে বলেন, ভিসি মহোদয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে আমাদের একটি সমন্বয় হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে আমরা গণমাধ্যম সূত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়টি জানতে পারি। আসলে সেখানে কী ঘটেছিল এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, পরবর্তীতে বিস্তারিত জানাতে পারবো।











