ঘনিষ্ঠ দলীয় নেতাকর্মীদের পরামর্শে এবার সরকারিভাবে বরাদ্দ বিরোধীদলীয় নেতার বাড়ি পেতে আবেদন করবেন বেগম রওশন এরশাদ। স্পিকারের কাছে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে দেয়ার চিঠি দেয়ার পরই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রওশনপন্থিরা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে চিকিংসা নিয়ে দেশে ফিরেই তিনি সরকারের কাছে এ আবেদন করবেন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরাতে গত ১লা সেপ্টেম্বর দলীয় ২৩ এমপি’র সম্মতি স্বাক্ষর নিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেয় দলের সংসদীয় দল। বর্তমানে ওই চিঠি রয়েছে স্পিকারের টেবিলে। আগামী সংসদ অধিবেশনের আগে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন না স্পিকার। এ রকম পরিস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে জিএম কাদেরকে সরিয়ে দিতে তৎপর রওশনপন্থি নেতারা।
এ নিয়ে একটি চিঠিও প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই চিঠিতে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদকে নতুন উপনেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। রওশনপন্থি নেতারা মনে করছেন, সরকারি বরাদ্দ বাসায় রওশন এরশাদ থাকলে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তার অবস্থান অনেক শক্ত হবে।
জিএম কাদেরপন্থিদের উদ্দেশ্যও সফল হবে না। সরকারি বাসায় না থাকায় প্রতি মাসে বাসাভাড়া হিসেবে ৭৫ হাজার ও বিদ্যুৎবিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ আরও প্রায় ৩০ হাজার টাকা পান রওশন এরশাদ। বিরোধীদলীয় নেতার বরাদ্দ বাড়িতে উঠলে ওই টাকা তিনি আর পাবেন না। চলতি মাসের শেষদিকে ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরবেন বলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, শারীরিকভাবে তিনি এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন। তাই আর কয়েকদিন পরেই দেশে ফিরে আসবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে আছেন। দেশে ফিরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। এরপরই সরকারি বাসা পেতে আবেদন করবেন বলে জানান জাতীয় পার্টির নেতারা।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সরকারি বাসভবনে ওঠেন। পরে ১৯৯৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সরকারি বাসভবনে থাকেন। ২০০১ সালের পর জাতীয় সংসদের আর কোনো বিরোধীদলীয় নেতা বাড়িটিতে থাকেননি। সবশেষ ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের নেতা হওয়ার পর ২৯, মিন্টো রোডের বিরোধীদলীয় নেতার বাড়িটিতে থাকতে আগ্রহ দেখিয়ে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেন রওশন এরশাদ। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতার চিঠি পাওয়ার পর বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় গণপূর্ত বিভাগ। তবে, শেষমেশ রওশন দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদে সরকারি বাসভবনে ওঠেননি। একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী বাড়িটি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। তবে সরকারি বাসভবনে উঠতে তার পক্ষ থেকেও কোনো আগ্রহ দেখানো হয়নি। গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাড়িটির বেশির ভাগ আসবাবপত্র এরইমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।
সংস্কার কাজ করে বাড়িটি বসবাস উপযোগী করতেও বেশ সময় লাগবে। ২০১৩ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ। এর এক বছর পর বাড়িটি সংস্কারের জন্য আবেদন করেন তিনি। প্রসঙ্গত, ১৯০৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কর্তাদের বসবাসের জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ২.৫ একর জমিতে দোতলা মূল ভবনের প্রত্যেক তলায় চারটি করে মোট আটটি কক্ষ রয়েছে। মিন্টো রোড এলাকায় যে পাঁচটি বাড়ির সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রয়েছে, এটি তার একটি। এ ছাড়া ডিসি’র বাংলো, বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবন, জেলা দায়রা জজের বাসভবন এবং দুদক চেয়ারম্যানের বাসভবনও সুনির্দিষ্টভাবে বরাদ্দ রয়েছে। এসব ভবনে নির্ধারিত ব্যক্তি না থাকলেও অন্য কাউকে বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম নেই।









