কীটনাশক স্প্রে ড্রোন বানিয়ে তাক লাগিয়েছেন সবুজ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের ছেলে সবুজ সরদার। চালকবিহীন ছোট প্লেনের পর এবার আবাদি জমিতে রাসায়নিক সার ছিটাতে তৈরি করেছেন ড্রোন। ৩০ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি করা তার এ ড্রোনটি বর্তমানে দুই লিটার তরল কীটনাশক বহনে স্বক্ষম।

ছোটবেলা থেকেই বিমান তৈরির স্বপ্ন দেখতেন সবুজ। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে তিনি ককসিট থেকে তৈরি করেন চালকবিহীন একটি বিমান। সেটি তিনি আকাশেও উড়ান। এবার ড্রোন তৈরি করে এলাকায় তাক লাগিয়েছেন সবুজ। তার দাবি, আর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আরো খরচ করা গেলে এই ড্রোনে ২০ থেকে ২৫ লিটার তরল কীটনাশক নিয়ে আকাশে উড়তে পারবে।

দুই লিটার তরল কীটনাশক বহনে স্বক্ষম ড্রোনটি

ভ্যান চালক একরামুল সরদারের ছেলে সবুজ ২০২১ সালে ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে দিনাজপুরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে পড়ালেখা করছেন তিনি। পরিবারের পক্ষে তাকে হোস্টেলে রেখে পড়ানোর ক্ষমতা নেই। তাই নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে ও পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে কিছু টাকা জমিয়ে এলাকায় দোকান খুলেছেন তিনি। সেখানে এই মেধাবী তরুণ টিভি মোবাইলের মেকারি করেন।

মহেশপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ তার ড্রোনটি আকাশে উড়িয়েছে। হাতের রিমোর্টের সাহায্যে ড্রোনটি থেকে জমিতে কীটনাশক ছড়াচ্ছেন তিনি। মাত্র তিন মাসে তৈরি ড্রোনটিতে জিপিএস লাগানো রয়েছে ফলে বাড়িতে থেকেও ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তিনি।

মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, সবুজ খুবই ভদ্র ছেলে। কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন তিনি। বাজারে মোবাইল মেকানিকের কাজও করেন। এরই মধ্যে চালকবিহীন বিমান ও জমিতে কিটনাশক স্প্রে ড্রোন তৈরি করে সবাইকে অবাক করেছেন তিনি। তার এই ড্রোন দেখতে স্থানীদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ভিড় করেন। ছেলেটি মেধাবী এবং পরিশ্রমি। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে হয়ত আরও ভালো কিছু করতে পারবেন তিনি।

সবুজ ও তার ড্রোন

সবুজের বাবা একরামুল সরদার বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ অনেক কষ্ট করে সংসার চালায়। ছেলেটা যখন এসব জিনিসপাতি তৈরি করতো তখন আমি ছেলের প্রতি খুবি রাগ করতাম। অনেক টাকা পয়সা খরচ হতো। কিন্তু এখন বুঝেছি ছেলে আমার দেশবাসীর উপকারের জন্য কাজ করছে। আমি চাই ছেলে আমার আরও বড় মানুষ হোক, দেশের জন্য আরও কাজ করুক।’

সবুজ সরদার বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা করি। প্রথমে চালক বিহীনবিমান বানিয়েছিলাম, সেটি আকাশেও উড়ে ছিলো। এবার আমি কৃষি কাজের জন্য একটি ড্রোন তৈরি করেছি। ড্রোনটিতে ২ লিটার পানি বহন করে শূণ্যে উড়তে পারছে। তবে আরও অর্থ ব্যয় করা যায় তাহলে ২০ থেকে ২৫ লিটার তরল পদার্থ বহন করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির জন্য আমি আরও কিছু করতে চাই। যদি সরকারি-বেসরকারিভাবে আমাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে দেশের জন্য কিছু আবিষ্কার করতে পারবো।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিন সরদার বলেন, ‘সবুজ আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। তার মধ্যে প্রতিভা লুকিয়ে ছিলো আমরা জানতাম না। তার এসব তৈরি দেখে আমরা অবাক হয়েছি। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে সবুজ।’