বাংলাদেশকে লজ্জা দিলো আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের সঙ্গে সাত উইকেটের হার দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করলো বাংলাদেশ। শারজায় সাকিবদের ছুঁড়ে দেয়া ১২৮ রানের মামুলি টার্গেট আফগানরা টপকে যায় সাত উইকেট ও ৯ বল হাতে রাকে। আফগানিস্তানের জয়ে বড় ভুমিকা রাখেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। মাত্র ১৭ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটার। ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাট থেকে এসেছে ৪১ রান।

মাত্র ১২৮ রানের টার্গেট দিয়েছিলো বাংলাদেশ। সেখানে ম্যাচের তৃতীয় ওভারে সহজ ক্যাচ ছাড়লেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সাকিবের করা তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে লংঅনে রহমতউল্লাহ গুরবাজের সহজ ক্যাচ ছাড়েন রিয়াদ।

তবে ম্যাচের পঞ্চম ওভারে সাকিবের কল্যানে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। ১৮ বলে ১১ রান করা গুরবাজেকে মুশফিকের স্ট্যাম্পিংয়ে পরিণত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

গুরবাজ আউট হলেও আরেক ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই আস্তে আস্তে বিপদজনক হয়ে উঠেন। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা জাজাইকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখেন মোসাদ্দেক। ২৬ বলে ২৩ রানে করেন এই আফগান ওপেনার।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১০ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ৪৮ রান।
জাজাইয়ের বিদায়ের পর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন নাবিজউল্লাহ জাদরান। ম্যাচের ১৫তম ওভারে তাসকিনকে দুই চার মেরে আফগানদের ম্যাচে ফেরান এই ব্যাটার। মেহেদির করা ১৬তম ওভারেও এক ছক্কা মারেন জাদরান। ম্যাচের ১৭তম ওভারে ১৭ রান দিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিলেন মোস্তাফিজ। ওই ওভারে দুই ছয় ও দুটি ওয়াইডদেন ফিজ। পরের ওভারে সাইফুদ্দিনদেন ২২ রান। এই দুই ওভারেই বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়েনেন ইব্রাহিম জাদরান ও নাজিবুল্লাহ জাদরান। এরা দু’জন চতুর্থ উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়ে সাত উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।

এর আগে শুরুতেই বড় বিপর্যয়ে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে চড়ে ৭ উইকেটে ১২৭ রান, সম্মানজনক পুঁজিই বলা যায়। ৩১ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ ২৭ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২৫ আর শেষদিকে শেখ মেহেদি ১২ বলে ২ চারের সাহায্যে করেন ১৪ রান।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে টসভাগ্য সহায় ছিল টাইগারদের। প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন শেষ সময়ে দলে যুক্ত হওয়া নাঈম শেখ। দ্বিতীয় ওভারে অফস্পিনার মুজিব উর রহমানকে আনেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নাবি। প্রথম ওভারেই সাফল্য মুজিবের। নাঈম শেখকে পরিষ্কার বোল্ড করে দেন তিনি। ৮ বলে ৬ করে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার।

ওয়ানডেতে যতই আত্মবিশ্বাসী মনে হোক, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেন এনামুল হক বিজয় একদমই মানিয়ে নিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এই ওপেনার নিয়মিতই ব্যর্থ হচ্ছেন টি-টোয়েন্টিতে। এশিয়া কাপেও এর ব্যত্যয় হলো না। ১৪ বলে মাত্র ৫ রান করে ফিরলেন সাজঘরে। মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণিতে ক্রস খেলতে গিয়ে লাইন পুরোপুরি মিস করেন বিজয়।

নাঈম শেখ, এনামুল হক বিজয়ের পর অপরিণামদর্শী শট খেলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক সাকিবও (৯ বলে ১১)। তিনটি উইকেটই নেন আফগান অফস্পিনার মুজিব উর রহমান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ২৮ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। সেখানেই থামেনি উইকেট পতনের মিছিল। পাওয়ার প্লের পরের ওভারে রশিদ খান বল হাতে নিয়ে যোগ দেন উইকেট শিকারের উৎসবে। এবার এলবিডব্লিউ মুশফিকুর রহীম (১)।

২৮ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে এরপর টেনে তোলার দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর তরুণ আফিফ হোসেন। পঞ্চম উইকেটে তারা দেখেশুনে খেলে যোগ করেন ২৫ বলে ২৫ রান। একাদশতম ওভারে এসে এই জুটিটি ভাঙেন রশিদ খান। আফগান লেগস্পিনারের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন আফিফ (১৫ বলে ১২)।

৫৩ রানে ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা। দলের চরম বিপদের মুখে দুটি জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ। প্রথমে আফিফ হোসেনকে নিয়ে ২৫ বলে ২৫, পরে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে ৩১ বলে ৩৬ রান যোগ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। অবশেষে ইনিংসের ১৬তম ওভারে রশিদ খানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ইব্রাহিম জাদরানের দারুণ ডাইভিং ক্যাচ হন তিনি। ২৭ বলে ১ বাউন্ডারিতে মাহমুদুল্লাহ করেন ২৫ রান। মোসাদ্দেক উইকেটে আসার পর ঠিক টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটাই করেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ফিফটিটা পাননি এবং সেটা নিজের ভুলেই।

আফগান মিডিয়াম পেসার ওমরজাইয়ের করা শেষ ওভারে তিন বল খেলে মাত্র ২ রান নিতে পারেন মোসাদ্দেক। আফগানিস্তানের বোলারদের মধ্যে ৩টি করে উইকেট নেন মুজিব উর রহমান আর রশিদ খান।