তাইওয়ানকে ঘিরে আবারও উত্তেজনা, সামরিক মহড়া চালালো চীন

আবারও উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে। রোববার তাইওয়ান সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৫ রাজনীতিক। আর এ নিয়েই চটেছে চীন। এর জবাবে তাইওয়ানের কাছাকাছি সামরিক মহড়া চালিয়েছে দেশটি। মার্কিন সিনেটর এড মার্কি ওই দলের নেতৃত্ব দেন। যদিও এটি কোনো সরকারি সফর ছিল না, সিনেটররা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তাইওয়ান সফর করেন। তবে বিষয়টির নিন্দা জানিয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিতে এক মুহূর্ত দেরি করেনি চীন। এর একদিনের মাথায়ই সামরিক মহড়া চালিয়ে জবাবও দেয় দেশটি।

বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, এ মাসের শুরুতে তাইওয়ান সফর করেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। সেসময় চীন-মার্কিন সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয় এবং তাইওয়ানকে অবরুদ্ধ করে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায় চীন। সেই উত্তেজনার পারদ নামতে না নামতেই পাঁচজন মার্কিন আইন প্রণেতা রোববার তাইপেতে পৌঁছান।

তারা প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে দেখা করেন।
এর জবাবে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন কমান্ড জানিয়েছে, তাইওয়ানের চারপাশের সমুদ্রে এবং আকাশসীমায় তারা বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু করেছে। যার উদ্দেশ্য তারা যুদ্ধের জন্য কতটা প্রস্তুত, সেটা পরীক্ষা করা। এক বিবৃতিতে তারা আরও বলেছে, তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্র যে রাজনৈতিক কূটচাল চালিয়ে যাচ্ছে এবং পুরো তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চেষ্টা করছে। এই সামরিক মহড়া তার বিরুদ্ধে এক কঠোর সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন রাজনীতিকদের এই তাইওয়ান সফর চীনের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখ-তা ক্ষুণ্ণ করেছে এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্টকারী, তাদের সেই চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে, এবং দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ নামে যে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ তারা গুঁড়িয়ে দেবে।

পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বলেছে, তাদের মহড়া চলছে তাইওয়ানের পেংগু দ্বীপপুঞ্জের কাছে। এদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, চীনের এই মহড়া আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, আমরা সামরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছি। তাইওয়ানের স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমরা সাধ্যমত সবকিছু করছি। তাইওয়ান সফররত মার্কিন সেনেটর এড মার্কি বলেছেন, একটি অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়ানোর নৈতিক দায়িত্ব তাদের আছে। তাইওয়ান অবিশ্বাস্য সংযমের পরিচয় দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার ১৫টি চীনা বিমান তাইওয়ান প্রণালির মধ্য-রেখা অতিক্রম করে। এই মধ্যরেখাকে দুই দেশের মাঝে অঘোষিত সীমান্ত বলে ধরা হয়। সিনেটর এড মার্কির নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল সোমবার তাইওয়ান ত্যাগ করেছে। তবে তারা তাইওয়ান ছেড়ে যাওয়ার পরই কেবল তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের ভিডিও প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইওয়ানের কোন আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত এই দ্বীপটিকে আত্মরক্ষার জন্য সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কখনোই তাইওয়ান শাসন করেনি। তবে তারা একথা স্পষ্টভাবেই বলেছে যে, দরকার হলে এই দ্বীপটি তারা জোর করে দখল করবে। তাইওয়ানকে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশ হিসেবে চিত্রিত করার যে কোন চেষ্টা চীনকে সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নীতি হচ্ছে, তারা তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণার যেমন বিরোধী, তেমনি চীন জোর করে তাইওয়ানকে নিজের দেশের অংশ করতে চাইলে সেটারও জোর বিরোধিতা করে।