বোয়ালখালীতে প্রভাবশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে বাড়ির সীমানা বিরোধের জেরে এক রিকশাচালককে চার দিন ধরে থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। চার দিনেও সীমানা বিরোধে সমাঝোতা করতে রাজি না হওয়ায় ওই রিকশাচালকের ছেলেকে মারধরের মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বোয়ালখালী পৌরসভার পূর্ব গোমদণ্ডী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ওই রিকশাচালকের নাম মো. ইউসুফ মিয়া (৬০)। তিনি পূর্ব গোমদণ্ডী এলাকার আবদুল মজিদের ছেলে। নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় তিনি রিকশা চালান।
মো. ইউসুফ মিয়াকে থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বোয়ালখালী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সামশুদ্দৌহা রাসেলের বিরুদ্ধে।
প্রতিবেশী শিমুল পালের সঙ্গে রিকশাচালক মো. ইউসুফ মিয়ার বিরোধ বলে জানা গেছে। গত বুধবার এএসআই সামশুদ্দৌহা রাসেল ইউসুফ মিয়া ও তার ছেলে মো. সেলিমকে থানায় ধরে নিয়ে যান। পরে থানায় আটকে রেখে সীমানার বিরোধ মেটাতে সমঝোতার জন্য ইউসুফ মিয়াকে চাপ দেওয়া হয়। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার বিকেলে ইউসুফ মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে বোয়ালখালীতে একটি হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরে অবস্থার অবনতি হলে ইউসুফের পরিবারের কাছে তাকে তুলে দেয়। পরে ইউসুফের পরিবার তাকে বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রিকশাচালক ইউসুফ মিয়া বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শনিবার রাতে রিকশাচালক ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী শিমুল পালের সঙ্গে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় বার বার আমাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন।’
‘পাঁচ দিন আগে শিমুল পাল, সুবধ চন্দ্র পাল, মনোতোষ, খোকনসহ কয়েকজন আমার বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর করে। তারা আমার মেয়েকে নষ্ট করে।’ বলেন ইউসুফ মিয়া
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বুধবার আমাকে ও আমার ছেলে সেলিমকে থানায় ধরে নিয়ে এসে আটকে রাখেন এএসআই রাসেল। শিমুল পালের সঙ্গে সীমানার বিরোধ মেটাতে সমঝোতার জন্য আমাকে চাপ দেন তিনি। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলায় চালান দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন এএসআই রাসেল। তিনি আমাকে মারধরও করেন।’
এদিকে শনিবার ইফতারের পর বোয়ালখালী থানা পুলিশ হাসপাতালে এসে ইউসুফ মিয়ার স্ত্রী জরিনা বেগমের কাছ থেকে একটি কাগজে সই নেন বলে জানান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউসুফ মিয়া।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সামশুদ্দৌহা রাসেল ব্যস্ততার অযুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইরুল ইসলামের সঙ্গে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটের দিকে যোগাযোগ করা হলে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান।
পরে রাত ৯টা ৪১মিনিটের দিকে ওসি মো. সাইরুল ইসলাম ফোন করে জানান রিকশাচালক ইউসুফ মিয়ার সঙ্গে শিমুল পালের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। ইউসুফ মিয়াকে থানা আটকে রাখার বিষয়টি সত্য নয়।
পরে আবার ওসি সাইরুল ইসলাম জানান দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ইউসুফ মিয়ার স্ত্রী জরিনা বেগম ও শিমুল পালের স্ত্রী তানিয়া পাল বাদি হয়ে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। ইউসুফ মিয়ার ছেলে সেলিমকে ওই মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১০ মে) দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয় বলে দাবি করেন ওসি সাইরুল ইসলাম।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঘটনা তদন্তে সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।