শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে কুরবানির পশুরহাট

মো.আলাউদ্দীনঃ

আজ বাদে কাল রবিবারই অর্থাৎ ১ দিন পরেই ঈদ-উল আযহা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটগুলো বেশ জমে উঠেছে। গত কয়েকদিন ক্রেতাদের তেমন ভিড় দেখা না গেলেও এখন উপজেলার সবগুলো পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের ঢল নেমেছে। তবে ফড়িয়া দালালদের হাত থেকে রেহাইও পাচ্ছেন না কেউই এমন অভিযোগও বাজারে আসা ক্রেতাদের। জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ এ বছর কাটিরহাট বাজার, নুরআলী মিয়ার হাট, বাকর আলী চৌধুরী হাট, হাজী জব্বার হাট, চারিয়া নয়াহাট বাজার, সরকারহাট বাজার, ইছাপুর বেড়িবাধ সংলগ্ন বাজার, মদুনাঘাট বাজার, বুড়িশ্চর বাজার সহ মোট ০৯ টি পশুর হাট ইজারা দিলেও, হাটহাজারী পৌরসভা বাজার, মিরেরহাট রেল লাইন সংলগ্ন বাজার এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গরু-ছাগল এনে প্রায় সব কটি গ্রামের বাড়ীর অলিতে গলিতে জমা করেছেন বিক্রীর উদ্দেশ্যে। এতে ক্রেতারাও খুশি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার হাটহাজারী পৌরসভা বাজারে গরুর দাম প্রায় সবার ক্রয ক্ষমতার মধ্যে ছিলো কিন্তু আজ শুক্রবার পরিস্থিতি অন্য রকম। যে গরু বৃহস্পতিবার ৬০/৭০ হাজারে বিক্রি হয়েছিলো ঠিক সেরকম গরু শুক্রবার ৯৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত হাটহাজারী ও মিরেরহাট, চৌধুরীহাট সহ বেশ কযেকটি বাজার ঘুরে এ পরিস্থিতি দেখা যায়। তবে অনেকেই বলছেন, শনিবার বিকালের দিকে শেষ বাজারে গরুর দাম অনেক কমে যেতে পারে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর হাটহাজারী উপজেলায় কোরবানীর জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫,৬৭২ টি। যার মধ্যে ১৫৮৩০টি গরু, ৯৩৩১টি ছাগল ও ভেড়া এবং ৫১১টি মহিষ। বিভিন্ন খামার এবং ব্যক্তি উদ্যোগে চাহিদার চেয়ে বেশী পশু প্রস্তুত হয়েছে। এলাকায় দেশীয় প্রজাতির বেশী ষাঁড় রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন খামারে ফ্রিজিয়ান, ক্রস, বাহামা, আমেরিকান, নেপালি ও সিন্দি জাতের ষাঁড়, বলদ এবং গাভীও রয়েছে। রয়েছে মহিষ, ছাগল ও ভেড়াও । এদিকে শুক্রবার উপজেলার ইছাপুর বাজার হওয়াতে জুমার নামাজের পর পর হাটহাজারী বাজার, মিরেরহাট বাজার সহ বিভিন্ন স্থানের পশু ব্যবসায়ীরা তাদের পশু ইছাপুর হাটে নিয়ে জড়ো করতে দেখা গেছে। ইছাপুর হাটে গরু কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, জুমার পর পর গরুর বাজারে বিক্রেতারা গরুর চড়া মুল্য ধরে আছে। আশা করছি সন্ধ্যার পর পর দাম কমে আসবে। হাটহাজারী পৌরসভার শায়েস্থা খাঁ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন হাটে গরু কিনতে আসা প্রবাসী জানে আলম সুমন বলেন, গরুর বাজারে গেলে দালালের পাল্লায় পড়ে ঠকে যেতে হয় অনেক সময়, তাছাড়া সেখানখার হৈচৈ মানুষের ভিড় আমার সহ্য হয়না যার কারনে আমি এখানে গরু কিনতে এসেছি। আবার এখানে বাজারের তুলনায় দামও সস্তা মনে হচ্ছে। সরেজমিনে বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে। কেউ পশুর দাম হাকছেন, কেউবা আবার দাম যাচাই করছেন। একাধিক ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিক্রেতারা এখনো দাম ছাড়ছেন না। কোরবানীর পশু কিনতে হাটে আসা কুতুব উদ্দীন নওশাদ, আবদুল মান্নান মিন্টু জানান, পছন্দের গরু কিনতে এসেছি। ঘুরেও দেখছি,পছন্দ হলেই নিয়ে নেব। তবে অন্যান্যা বারের তুলনায় প্রচুর গরু সমাগম হলেও ব্যাবসায়ীরা দাম চাইছেন বেশী। তাই পশু কিনতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। আর দালালদের উৎপাত সেটাতো আছেই। পশু বিক্রেতা আবদুস সালাম জানান, গত বুধবারের হাটে একটি পশু নিয়ে গিয়েছিলাম, ক্রেতারা দাম করেছিল ৯৮ হাজার টাকা। পরে বাধ্য হয়ে পশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়েছে। আজ আবার পশুটিকে হাটে নিয়ে এসেছি কিন্তু আজও ৯৫ হাজরের বেশি দাম করা হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কুরবানির দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই গরুর দাম কমে যাচ্ছে। তার মতে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার পশুর দাম অনেক কম। এতে করে খামারিদের অনেক লোকসান গুণতে হবে বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে গরুর পাশাপাশি ছোট সাইজের ছাগল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা,মাঝারি সাইজের ছাগল ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা ও বড় সাইজের ছাগল ২২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পশু খামারি আব্বাস বলেন, হাটে এখনো ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সমাগমই বেশি ঘটছে। তাই পশুর দাম একটু কমেই রয়েছে। তবে মনে হচ্ছে ০৯ তারিখ শেষ হাটে পশুর সঠিক দাম পাওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে হাটে কয়েকজন ইজাদারের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রথম দিকে কম হলেও শেষের দিকে হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠছে। ঈদের আর মাত্র ১ দিন বাকী আছে। পরের হাটে বিক্রি আরো বাড়বে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আইন-শৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। পশুর হাটগুলোতে যাতে কোন বিশৃংখলা সৃষ্টি না হয় এবং জালনোট বিলি করতে না পারে উপজেলা প্রশাসন সেদিকে নজরদারী রেখেছেন। ক্রেতা সাধারন যেন র্নিবিঘ্নে কোরবানীর পশু কেনাকাটা করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি স্পটে পুলিশের পাশাপশি ডিবি পুলিশ ও টহল দিচ্ছে।টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে জাল নোটের ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।