বৃটেন থেকে হেঁটে হজে গেলেন মোহাম্মদ

স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বৃটিশ হজযাত্রী এডাম মোহাম্মদের। তিনি পুরো পথ পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কায় গিয়েছেন এই স্বপ্ন পূরণে। ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদ এই যাত্রায় পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান। তারপরই তিনি পৌঁছেছেন সৌদি আরবে। এতে তার সময় লেগেছে ১১ মাস ২৬ দিন। এ সময়ে তিনি হেঁটেছেন ৬৫০০ কিলোমিটার পথ। গড়ে প্রতিদিন হেঁটেছেন ১৭.৮ কিলোমিটার পথ। এরপর গত ২৬শে জুন পৌঁছেছেন মক্কার আয়েশা মসজিদে। সেখানে তাকে অভিনন্দন জানাতে আগে থেকেই আকাশপথে উড়ে গিয়েছেন তার দুই মেয়ে, স্থানীয় অধিবাসীরা ও বিপুল পরিমাণ হজযাত্রী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।
মোহাম্মদ বলেছেন, সফর সমাপ্ত করতে পেরে আমি ভীষণ খুশি।

সৌদি নাগরিক ও অন্যদের আতিথেয়তা, উদারতা ও ভালবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। হজ হলো আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। তাই এই হজ পালনের জন্য ছিলাম উদগ্রীব। এ অবস্থায় তিনি যখন আরাফাতের ময়দানে দাঁড়াবেন, তখন তার কেমন অনুভূতি হবে তা নিয়ে কথা বলেছেন। মোহাম্মদ বলেন, এই সফরকে সম্ভব করে দেয়ার জন্য, আমার সব সময়ের স্বপ্নকে সত্যে রূপ দেয়ার জন্য আমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা কোনো সহজ সফর ছিল না। আল্লাহর রাহে আমাকে সবকিছু উৎসর্গ করতে হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির ফলে বিধিনিষেধ দেয়ার সময় থেকেই আমি সঙ্গে থাকা পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকি। একদিন ঘুম থেকে জাগার পর আমার ভিতর কে যেন বলে গেল, বাড়ি থেকে সোজা পায়ে হেঁটে মক্কায় যাও। এই আহ্বানকে আমি অবহেলা করতে পারি না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম হেঁটেই যাবো হজে।
বৃটিশ একটি সংগঠনের সহায়তায় এবং দেশের অনুসারী মানুষদের অনুদানে দুই মাস সময় লাগে তার এই সফর শুরু করতে। মোহাম্মদ একজন ইরাকি বংশোদ্ভূত কুর্দি। তিনি ২০২১ সালের ১লা আগস্ট উলভারহ্যাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করেন। সঙ্গে নেন একটি কার্ট বা ঠেলাগাড়ির মতো জিনিস। এতে তার ব্যবহৃত ২৫০ কিলোর মতো জিনিসপত্র। তিনি বলেন, এই কার্টটি আমি নিজেই তৈরি করেছি। এর ভিতরেই আমি খাবার খাই। ঘুমাই। খাবার রান্না করি। আরও বলেছেন, আবহাওয়া ও সফরে নানা জটিলতা ছাড়া তিনি মক্কার পথে অন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেননি। কয়েকটি দেশে পুলিশ আমাকে থামিয়েছিল। তদন্ত করেছে তাদের দেশে প্রবেশের জন্য। কিন্তু যখন আমার এই সফর সম্পর্কে তারা জানতে পেরেছে, তখন বিস্মিত হয়েছেন।
তার এই সফরের অনেক মানুষ সাহায্য করেছেন। কেউ তার ট্রলি বা কার্ট ঠেলে দিয়েছেন। কেউবা তাকে খাবার দিয়েছেন। কেউবা তাকে একটু বিশ্রাম নিতে বলেছেন। এ সময়ে তিনি ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকে তার চ্যানেলে এই সফরের অভিজ্ঞতা সরাসরি সম্প্রচার করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন শান্তি ও সমতার বার্তা।