চীনের ওপর রাগ করে দেশ ছাড়ছে হংকংয়ের তরুণরা

‘আমি শহরে থাকব কি থাকব না’-এমন জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি হংকংয়ের তরুণ প্রজন্ম। বিশেষ করে ব্রিটেন কর্তৃক চীনের কাছে হস্তান্তর পরবর্তী প্রজন্মই এখন ‘এক দেশ দুই সিস্টেম’র বিরুদ্ধে সোচ্চার।

১৯৯৪ সাল থেকে হংকং পাবলিক ওপিনিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুসারে এক দেশ, দুই সিস্টেমের প্রতি জনগণের আস্থা ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঐতিহাসিকভাবে নিম্নস্তরে পৌঁছেছে। নিজেদের স্বাধীনতায় চীনের হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারছে না তারা।

যার ফলে রাগে-ক্ষোভে দেশ ছাড়তে শুরু করেছে দেশটির অধিকাংশ তরুণ প্রজন্ম। হংকংয়ের চাইনিজ ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা অনুসারে স্বাধীনতা হরণের পটভূমিতে প্রায় ৬০ শতাংশ তরুণ ২০২১ সালে দেশত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

২০১৯ সালে পরিচালিত আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৮-২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকে সমর্থন করেছেন। ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর যে আশায় বুক বেঁধেছিল হংকংবাসী-২৫ বছর পর এসে প্রকাশিত হলো তাদের সে আশা গুঁড়েবালি।

১৯৯৭ সালের ৩০ জুন মধ্যরাত থেকে চীন শাসনে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রপন্থি আইনপ্রণেতা লি উইং ট্যাট শহরের আইনসভার বারান্দায় সহকর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এক প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। ফল হলো, আইনসভার সদস্যপদ হারালেন লি এবং তার সহকর্মীরা। তখন থেকেই মূলত হংকংবাসী বুঝে নিয়েছিলেন তাদের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে।

২৫ বছর বয়সি নাগরিক আইরিস (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমরা যে আশায় বুক বেঁধেছিলাম, সেগুলো এখন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে পড়েছে। এখানে বাকস্বাধীনতা নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা তিরোহিত। সব মিলে আমরা সরকারের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।’

এ প্রজন্মের অনেক তরুণই নিজেদের ‘অভিশপ্ত প্রজন্ম হিসাবে’ মনে করে। কারণ, কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেন না তারা। বেইজিংয়ের ঢেলে দেওয়া কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বিদ্রোহ, বিচ্ছিন্নতা, সন্ত্রাসবাদ বা বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ নিষিদ্ধ করা হয়।

হংকং শাসনে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি বদলের কারণ নেই-শি : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, হংকং পরিচালনায় যে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি পরিচালনা করা হয়, তা পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই।

শুক্রবার যুক্তরাজ্য থেকে চীনের কাছে হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের ২৫তম বার্ষিকীতে এ কথা বলেন তিনি। এদিনই হংকংয়ের নতুন নেতা হিসাবে শপথ নেন জন লি।

১৯৯৭ সালের ১ জুলাই যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ পায় চীন। দিনটি সামনে রেখে বৃহস্পতিবারই হংকং সফরে যান সি জিন পিং।

আজ অঞ্চলটির নেতা জন লির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সি জিন পিং বলেন, হংকং শাসনের ক্ষেত্রে যে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে, তা বজায় থাকবে। ‘এ ধরনের ভালো ব্যবস্থাটি পালটানোর কোনো কারণ নেই। এটি দীর্ঘ মেয়াদে বজায় রাখতে হবে’, বলেন সি। শপথ অনুষ্ঠানে সি জিন পিংসহ উপস্থিত সব কর্মকর্তা মুখে মাস্ক পরেছিলেন এবং একে অপর থেকে কমপক্ষে এক মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন।