‘মা’, এক অক্ষরের পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মায়ের তুলনা শুধুই মা। মাকে ঘিরে সন্তানের বিচিত্র বিশ্লেষণ থাকে। তবুও যেন মাকে ডাকার অথবা তাকে নিয়ে কিছু বলার তৃপ্তি মিটে না। সর্বসাধারণের মতো তারকারাও মাকে নিয়ে বলেন, লিখেন।
১২ মে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে এমনই কয়েকজন তারকারা মাকে নিয়ে বলেছেন তাদের মনের কথা।
আমার মা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন : মৌসুমী
আমি আমার মা-বাবার প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মের পর থেকেই অনেক আদর, øেহ, মায়া মমতায় বেড়ে উঠেছি। মায়ের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমার সখ্য। মায়ের আদর, স্নেহ, ভালোবাসায় প্রত্যেক সন্তানই বেড়ে ওঠে। আমার কাছে মনে হয় আমার মা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন। তাই কখনোই আমার মা আমাকে চোখের আড়াল হতে দিতেন না। আমি যখন মিডিয়ার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করি এবং পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করি, আমার প্রয়াত বাবাই প্রতিটি মুহূর্তে আমার পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দিতেন।
আমার প্রতি তিনি এতটাই সচেতন ছিলেন, আমাকে কীভাবে ভালো লাগবে, আমার অভিনয় কীভাবে ভালো হবে, তিনি সবসময়ই বলতেন, শুধু একজন নায়িকা হিসেবেই নয়, একজন সত্যিকারের অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকের মনে থেকে যেতে হবে যুগের পর যুগ। তার এই কথাগুলো আমাকে অনুপ্রেরণা দিত। আব্বু চলে যাওয়ার পর মা-ই তার দায়িত্ব পালন করছেন। এখন আম্মুর বয়স হয়েছে। টুকটাক কিছু অসুস্থতা লেগেই থাকে।
তারপরও আম্মু যতটুকু সময় পান আমার কাজগুলো দেখার চেষ্টা করেন। আমাকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করেন। এখনও আমি বাইরে থেকে বাসায় ফেরার পর ‘মাম্মি’ বলে যখন আম্মু ডাকেন তখন প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। ছোটবেলায় আম্মুর আদরে ভালোবাসায় আমি বেড়ে উঠেছি, সেই ভালোবাসার মায়াজালেই তাকে সারাটা জীবন আমার কাছে রাখতে চাই। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ রাখেন ভালো রাখেন। কারণ তিনিই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু, আমার চলার পথের শক্তি। আম্মুকে ছাড়া আমি একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না।
আম্মু জানেন আমি তাকে কত ভালোবাসি : অপূর্ব
আমার জীবনের যা কিছু প্রাপ্তি, যা কিছু অর্জন সব কিছুর নেপথ্যে যে মানুষটির উৎসাহ, অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি, তিনি আমার মা। ছোটবেলা থেকেই আমার প্রতিটি কাজে আম্মু আমাকে উৎসাহ দিয়ে আগামীতে আরও ভালো করতে সাহস দিতেন। এটা সত্যি, আয়োজন করে কখনোই বলা হয়ে ওঠে না মাকে সত্যিকারার্থে কতটা ভালোবাসি। অবশ্য এটা আম্মুও বুঝেন আমি তাকে কতটা ভালোবাসি।
পৃথিবীতে এমন অনেক অভাগা সন্তান আছে যারা মা-বাবা বেঁচে থাকার পরও তাদের ভালোবাসতে পারে না, সেবা করতে পারে না। মা-বাবার সেবা করার মধ্যে যে সুখ আছে, শান্তি আছে, তা পৃথিবীর অন্য কিছুতে নেই। আমার সৌভাগ্য যে, আমার বাবা-মা দু’জনই বেঁচে আছেন এবং আমার সঙ্গেই আছেন। আমি সবসময়ই চেষ্টা করি তাদের যেন কোনোরকম অসুবিধা না হয়।
ছোটবেলায় আমাদের সব ভাই-বোনদের আম্মু আব্বু যেভাবে আদর করে, øেহ দিয়ে আগলে রেখেছেন সেভাবে হয়তো আমি, আমরা পারব না। আমরা বড় হয়েছি, আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। কিন্তু কোনো কিছু এতই গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, বাবা-মা’র জন্য আমাদের সময় থাকবে না। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত বাবা-মাকে সময় দেয়া। কারণ তারা আমাদের কাছে সত্যিই কিছু চান না। শুধু ভালোবাসা চান। আর কিছুই না। আমার মা আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একজন মা।
আমার সৌভাগ্য কয়েকবছর আগে আমার কৃতিত্বের জন্য আমার মা ‘গরবিনী মা’ সম্মাননায় ভূষিত হন। দোয়া করি মা তুমি সুস্থ থাক, আমাদের পাশে থাক সারাটি জীবন। তোমার ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই। তুমি ছাড়া এ জীবন শূন্য, কারণ তোমাতেই আমি পূর্ণ।
আমার সবকিছুই মাকে ঘিরে : তারিন
আমার আম্মু আমার জীবনের আদর্শ, আমার শক্তি, অনুপ্রেরণা। আমার সবকিছুই মাকে ঘিরে। এ পৃথিবীর আলো বাতাস এই যে নিঃশ্বাস নিচ্ছি, তা মায়ের ত্যাগের কারণেই জন্মের শুরু থেকেই নিতে পারছি। মায়ের যেমন বিকল্প হয় না, ঠিক তেমনি মায়ের কোনো তুলনা হয় না।
ছোটবেলা থেকে আমার বেড়ে ওঠা, আমার শিক্ষা, নৃত্যশিল্পী ও সঙ্গীতশিল্পী সর্বোপরি একজন অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে আমার মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তার কাছেই আমার গানে হাতেখড়ি। অভিনয় জীবনের শুরুতে তিনিই ছিলেন আমার কো-আর্টিস্ট। যখন কোনো স্ক্রিপ্ট হাতে পেতাম তখন মাকে শোনাতাম। তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিনয়ের চর্চা করতাম। আর এভাবেই আমার অভিনেত্রী হয়ে ওঠা।
শুটিংয়ে সকাল থেকে রাত অবধি বসে থাকা অনেক বোরিং একটি কাজ। কিন্তু আমার মা বছরের পর বছর আমার জন্য দিনের পর দিন বসে থেকেছেন ধৈর্য ধরে। এটা যে কত বড় সেক্রিফাইস তা বলে বোঝানো যাবে না। তাই মায়ের ঋণ কোনোদিনই শোধ করার নয়।
আমাকে মা ছাড়া আর কেউই বোঝেন না : মিম
যখন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি সেই সময়টাতে আমি মা-বাবাকে ছাড়া থেকেছি। কিন্তু সেটা কিছুদিনের জন্য। এরপর আমার যতদূর মনে পড়ে মাকে ছাড়া অন্তত আমি একা কোথাও থাকিনি। কারণ মা ছাড়া আমি একদমই অচল। তাকে ছাড়া পথ চলতে হবে এটা আমি ভাবতেই পারি না। আমরা দু’বোন। ছোটবেলা থেকেই মা বুকে আগলে রেখে বড় করেছেন।
মায়ের ভালোবাসা, আদর, মমতায় নিজেকে গড়ে তুলেছি মায়ের স্বপ্নের মতোই। আমি বিখ্যাত কিছু একটা হব, এটা মায়েরই স্বপ্ন ছিল। তাই মায়ের স্বপ্ন পূরণে এখনও আমি নিরলস পরিশ্রম করছি। হয়তো এখনও মায়ের কাছে তেমন কিছুই হতে পারিনি। কিন্তু তারপরও মা আমাকে যেভাবে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেন তাতে আমি অবাক হই। কারণ তার এই যে ধৈর্য, এটাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।
আমি বড় হয়েছি এটা যেমন মাঝে মাঝে প্রমাণের চেষ্টা করি, কিন্তু মা কোনোভাবেই মানতে রাজি নন যে আমি বড় হয়েছি। অবশ্য এটা আমার ভালোই লাগে। মায়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে আমার নিজের মধ্যে এক অন্য রকম শান্তি কাজ করে। এ শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বিধাতা আর কোথাও এমন শান্তির স্থান সৃষ্টিও করেননি। তাই আমি আজীবন এ শান্তির স্থানেই থাকতে চাই, মাকে ভালোবেসে যেতে চাই আজীবন।
বিভিন্ন কারণে কারও ওপর বিরক্ত হলে আমি মায়ের সঙ্গেই রাগারাগি করি। মা এটা বুঝে ঠিকই আমাকে শান্ত করেন। এমনভাবে কিন্তু আমাকে আমার মা ছাড়া আর কেউই বুঝবেন না। বুঝবেন না বলেই পৃথিবীতে মায়ের কোনো তুলনা হয় না, বিকল্প হয় না।