নিহত ১, ৪শ গ্রাম প্লাবিত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৩ উপজেলা

    মুষলধারে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ৭টি উপজেলার ৪ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এপর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষাধিক মানুষ। তিনটি উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। বন্যায় ভেসে গেছে মৎস্য খামার। হঠাৎ করে বন্যা ভয়াবহ বন্যা কবলিত হয়ে চরম অসহায়ত্বে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সময় যত গড়াচ্ছে দূর্ভোগ ততই বাড়ছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলের পানি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলার নদী ও হাওর তীরের বাসিন্দারা। হাকালুকি,কাউয়াদিঘি,হাইলহাওর এই তিনটি হাওর ছাড়াও মনু,ধলাই,ফানাই.কন্টিনালা ,জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছেই।

    ইতিমধ্যেই হাকালুকি হাওর তীরের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। বিদ্যুৎ এর সাব স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বড়লেখা,জুড়ী ও কুলাউড়ার অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুহীন হয়ে পড়েছে।
    জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান বড়লেখা উপজেলায় ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওড় এর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড়লেখা পৌর এলাকা এবং ১০টি ইউনিয়নের ২শ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত হয়ে দূর্ভোগে পড়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ। ওই উপজেলায় পাহাড় ধ্বসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে ১ জন নিহত ও সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে ১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিদ্যুৎ এর সাব স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত থাকায় বিদ্যুহীন পুরো উপজেলা। কুলাউড়া উপজেলায় নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৭টি ইউনিয়ন ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে মহিষমারা,বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া,পুরশাই গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অর্ধ শতাধিক গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

    জুড়ী উপজেলার ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে। ওই উপজেলায় পাহাড় ধসের দূর্ঘটনাও ঘটেছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন খলিলপুর,মনুমুখ,আখাইলকুড়া,কনকপুর,কামালপুর,চাঁদনীঘাট ইউপি (আংশিক) প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত হয়ে পড়েছেন ৭,৫০০ মানুষ। রাজনগর উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ওই উপজেলায় বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার মানুষ। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে ওই উপজেলায় বন্যা দুর্গত হয়ে পড়েছেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ।

    কমলগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া ওই পরিসংখানের বাহিরেও অনেক ইউনিয়ন, গ্রাম ও পরিবার নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছেন বলে স্থানীয় দূর্ভোগ্রস্তরা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে কন্টোলরুম খোলা হয়েছে। অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে মৌলভীবাজার জেলার ‘জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র জরুরী সভা অনুষ্ঠিত। এদিকে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শনিবার রাত ৯ টায় মৌলভীবাজার জেলার ‘জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র, সি ই ও, জেলা পরিষদ মৌলভীবাজার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,সিভিল সার্জন,এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার,পানি উন্নয়ন বোর্ড,এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার স্থানীয় সরকার, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার,সড়ক বিভাগ,ফায়ার ব্রিগেডের প্রতিনিধিসহ জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অতিবৃষ্টির কারণে সম্ভাব্য ভূমিধস এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ক আলোচনা হয়।