ঘূর্ণিঝড় ফণীতে লাভ দেখছে চট্টগ্রাম বন্দরও। যদিও এর প্রভাবে টানা তিন দিন অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের। আর এতেই বাড়তি মাসুল গুনছে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়তে পারে রমজানের ভোগ্যপণ্যের ক্রেতাদের উপরে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বন্দরে যে জাহাজজট সৃষ্টি হয়েছে সেটি পুরোপুরি সচল হতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। তিনদিন বন্দর অপারেশনাল কাজ বন্ধ থাকায় আপাতদৃষ্টে চট্টগ্রাম বন্দর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ধারণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে বন্দর আর্থিকভাবে লাভবান হবে এতে।
তিনি বলেন, টানা তিন বন্দরের অপারেশনাল কাজ বন্ধ থাকায় কন্টেইনারগুলো বন্দরে পড়েছিল। সেই সঙ্গে জাহাজগুলোও বন্দরে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি অবস্থান করছে। সে হিসেবে বাড়তি সময় অবস্থানের কারণে বিভিন্ন খাতে বন্দরকে বেশি চার্জ পরিশোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
বর্তমানে ২১টি জাহাজ পর্যায়ক্রমে জেটিতে আসতে শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, বন্দরে চারদিনের বেশি কন্টেইনার অবস্থান করলে ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের জন্য ৬ ডলার এবং ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের জন্য ১২ ডলার অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া বন্দরে জাহাজ অবস্থানের জন্যও রয়েছে আলাদা মাসুল। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার ২২০ কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা হয়। তিনদিন বন্ধ থাকায় প্রায় ২৫ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেল হয়নি। প্রতিদিন গড়ে ১৫ জাহাজ পণ্য জাহাজীকরণ কিংবা খালাসের কাজ সমপন্ন হয়। গত তিনদিনে অন্তত ৪৫ জাহাজের পণ্য খালাস করা যায়নি। তিনি বলেন, ফণীর প্রভাবে যে ৩০০ লাইটারেজ জাহাজ সদরঘাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো সেগুলো বন্দর এলাকায় আনা হয়েছে। এরমধ্যে কিছু জাহাজ পণ্য বোঝাইয়ের কাজ করছে। কিছু জাহাজ রিভার মাউথে রাখা হয়েছে। বহির্নোঙ্গরে পাঠিয়ে দেয়া ২১টি বড় জাহাজকে পুনরায় জেটিতে আনা হয়েছে।
ওমর ফারুক আরো বলেন, বন্দরের জাহাজ ও কন্টেইনার জট কমিয়ে আনতে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি দিনে অন্তত আরো দুই জাহাজের পণ্য খালাস করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছে বন্দর। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ পনের দিনের মধ্যে জট সারানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপ সংরক্ষক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ৯৭ বড় জাহাজ অবস্থান করছে। এরমধ্যে ৩৪ জাহাজ কাজ করছে। চারটি বাল্ক ভ্যাসেল এং ২০টি কন্টেইনার ভ্যাসেল বার্থিং করার অপেক্ষায় আছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়াশিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক সরওয়ার আলম খান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে তিন দিনে কোনো কন্টেইনার ওঠানামা করেনি। পণ্যও খালাস হয়নি। তিন দিনে তৈরি হয়েছে জাহাজ ও কন্টেইনার জট। এতে বন্দর লাভবান হলেও কাস্টমস, শিপিং এজেন্সি, আমদানি-রপ্তানিকারক, সিএন্ডএফ কোমপানি, পরিবহন সেক্টরসহ সব প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হবে আর্থিক ক্ষতি। তবে আর্থিক অংকে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয় করা কঠিন। এই ক্ষতির কারণে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে। যার ধাক্কা গিয়ে পড়বে ক্রেতাদের উপরে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইব্রাহিম খলিল এর প্রতিবেদন মানবজমিন থেকে নেয়া