রোহিঙ্গাদের ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা শুরু, কাল সমাবেশ

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোয় ‘গো হোম’ বা ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা শুরু করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। কয়েক দিন ধরে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্যাম্পের অলিগলি ও শরণার্থীদের বাড়িতে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে এ কর্মসূচি চালাচ্ছেন শরণার্থীরা। প্রচারণা কর্মসূচি পরিচালনা করছেন শিক্ষিত রোহিঙ্গারা, যাঁদের বেশির ভাগ তরুণ-যুবক। এ ক্যাম্পেইনের বিষয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিতে কাল রোববার সকালের দিকে উখিয়া ও টেকনাফে বৃহৎ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। অন্তত ১২টি স্থানে একাধিক সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন চলছে কালকের সমাবেশকে সফল করার আহ্বান। রোহিঙ্গা সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘বাড়ি চলো’ কর্মসূচির ব্যানার-পোস্টারের দেখা মিলছে আশ্রয়শিবিরগুলোর অলিগলিতে। আজ শনিবার সকাল থেকে উখিয়ার বালুখালী, লম্বাশিয়া, মধুরছড়া ও কুতুপালং আশ্রয়শিবিরগুলোর রাস্তা ও অলিগলিতে বেশ কিছু ব্যানার টাঙানো হয়েছে ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা কর্মসূচির। ব্যানারে পাঁচ বছর আগে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে দল বেঁধে বাংলাদেশ পালিয়ে আসার মুহূর্তে তোলা রোহিঙ্গাদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবির ওপরে-নিচে ইংরেজি, বর্মিজ ও রোহিঙ্গা ভাষায় লেখা হয়েছে স্লোগান। একটি ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘আমরা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) রোহিঙ্গা জাতি। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের আশ্রয়ে আছি। সে থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি মিয়ানমার। ফেরত নিয়ে যাওয়ার আইনি সরকারও নেই মিয়ানমারে। সুতরাং আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। চলো বাড়ি ফিরে যাই।’

শরণার্থীদের ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে না প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা কর্মসূচির মূল আয়োজক আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)। এ সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ (৫০)। তিনি ছিলেন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা এবং প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনবিরোধী মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার মাস্টার আবদুর রহিমের নেতৃত্বে একদল বন্দুকধারীর গুলিতে খুন হন মুহিবুল্লাহ। মুহিবুল্লাহ হত্যার পর এ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও আশ্রয়শিবির থেকে আত্মগোপন করেন। এখন ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা কর্মসূচি হচ্ছে ‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী’ ব্যানারে।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা কলিম উল্লাহ (৫৮) বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সোচ্চার ছিল এআরএসপিএইচ সংগঠন। মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস আগে সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ ঘোষণা করেছিলেন ‘বাড়ি চলো’ প্রচারণা কর্মসূচির। যে এআরএসপি কার্যালয়ে আরসা সন্ত্রাসীরা গুলি করে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছিল, সে কার্যালয়ের ভেতরে এখনো বড় ব্যানারে লেখা আছে ‘বাড়ি চলো’ স্লোগান।

আয়োজকদের একজন আয়াছুর রহমান বলেন, ‘২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এ উপলক্ষে ১৯ জুন উখিয়া-টেকনাফের সব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একসঙ্গে পৃথক পৃথক স্থানে দাঁড়িয়ে আমরা রোহিঙ্গারা সমাবেশের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে চাই, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। আরাকান রাজ্য (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) আমাদের জন্মভূমি। আমরা জন্মভূমিতে ফিরতে চাই।’