উঁচু জোয়ারে চরাঞ্চল প্লাবিত

গত দুদিন জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২ দশমিক ৭১ মিলিমিটার, যা বিপজ্জনক সীমা থেকে ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে।

জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলার চরাঞ্চল ও বাঁধের বাইরের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে সেখানকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানির কারণে রান্না করতে পারছেন না।

পূর্ণিমার প্রভাবে গত কয়েক দিন উঁচু জোয়ার দেখা দেয়। এতে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস বাঁধের বাইরে দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তরে রূপাতলী-রামদাসপুর, কানিবগার চর, ভোলার চর, পূর্ব-ইলিশা ইউনিয়নের গাজীপুর চর, কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝেরচর, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চরচটকিমারা, ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর হোসেন, গাজীর চর, চর নিউহোসেন; দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন, মেদুয়া ইউনিয়নের নেয়ামতপুর, ভবানীপুরের চরাঞ্চল ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যে জেগে ওঠা একাধিক চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভোলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার সকালে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২ দশমিক ৭১ মিলিমিটার, যা বিপজ্জনক সীমা থেকে ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে। এ কারণে চরাঞ্চল ও বাঁধের বাইরের জমি প্লাবিত হয়েছে। সেখানে অনেক স্থানে বাঁধ নেই।

দক্ষিণ রাজাপুরের রুহুল আমিন মিজি বলেন, ‘এক দিকে ভাঙন, আরেক দিকে জোয়ার, শঙ্কায় রাত কাটছে।’

মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ফারুক দৌলত বলেন, ‘জোয়ারে ফসলের চেয়ে মাছের বেশি ক্ষতি হয়েছে। মানুষের চলাফেরা, রান্নাবান্নায় সমস্যা হচ্ছে।’

মনপুরা উপজেলায় বাঁধের বাইরে রয়েছে চর কলাতলী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল। এসব এলাকায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস। উঁচু জোয়ারে ও বৃষ্টিতে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কলাতলী ইউনিয়নের অফিস খাল এলাকার কৃষক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, তাঁদের এলাকার সব ফসলি জমি, পুকুর, উঠান ও কাঁচা সড়ক ডুবে গেছে। খেতের ফসল তলিয়ে গেছে। কৃষক খেতে চাষ দিয়ে বাইন (ছিটানো আমন) দেবে। কিন্তু উচ্চ জোয়ারের কারণে চাষ দিতে পারছে না।

কলাতলী ইউনিয়নের মনির বাজারের পল্লি চিকিৎসক আল আমিন বলেন, কলাতলী চরের চারপাশে কোনো বাঁধ নেই। তাই জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, খেত, বাড়ির উঠান, অনেকের রান্নাঘরে পানি ঢুকেছে। দিনরাতে দুই দফা জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার কারণে বাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলো রান্না করতে পারছে না। অনেকের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। শুকনো খাবারই তাদের ভরসা।

কলাতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুর রহমান বলেন, তাঁর এলাকায় আনুমানিক তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় কষ্টে আছে।

কলাতলী ছাড়াও উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট, সোনারচর গ্রামে বাঁধের বাইরে প্রায় দুই হাজার মানুষ, মনপুরা ইউনিয়নের আন্দিরপাড়, কূলাগাজীর তালুক ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়, রামনেওয়াজ লঞ্চঘাট, কাউয়ারটেক গ্রামে বাঁধের বাইরে প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।

মনপুরা ইউপির চেয়ারম্যান আমাতুল্লাহ আলমগীর বলেন, পানিবন্দী মানুষের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার দেওয়া দরকার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে মনপুরা উপজেলার কলাতলী ইউনিয়ন, চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়ন এবং তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা ও সোনাপুর ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে। এসব ইউনিয়ন মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরাঞ্চল। পূর্ণিমার প্রভাবে ওঠা এই উঁচু জোয়ার দু-তিন দিন থাকবে।

চরফ্যাশনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, পানিবন্দী মানুষের তালিকা করা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।