আজ কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসের ৫ বছরঃ এখনও ঝুঁকিতে বসবাস করছে শত শত পরিবার

কাপ্তাই প্রতিনিধি:

২০১৭ সালের ১৩ জুন। আজকের দিনটি কাপ্তাইবাসীর জন্য এক বিভীষিকাময় দিন। ঘটনার আগের দিন (১২ জুন) মধ্যরাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। টানা বর্ষনে ঘরবন্দি মানুষ। অতিবৃষ্টিতে সেদিন কাপ্তাইয়ের সব সড়ক পথ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। অজানা আশঙ্খা ভর করেছিল জনমনে। ১৩ জুন সকালে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটলো মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনা। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে লাগলো মৃত্যুর খবর। সেদিন সকালে প্রথম দূঃসংবাদটি আসে ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি হতে। ভয়াবহ পাহাড় ধসে সেদিন ওই এলাকায় বসবাসরত নুরনবীসহ তার ছেলের গর্ভবতী স্ত্রী এবং তার শিশু পুত্র ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসসহ ওই এলাকায় ছুটে যায় তদান্তিন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ দিলদার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম এবং ১নং চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী। এরপর একে একে ওয়াগ্গার মুরালীপাড়া, রাইখালীর কারিগর পাড়া এবং চিৎমরম থেকে পাহাড়ধ্বস ও হতাহতের খবর আসতে থাকে। সেদিনের পাহাড় ধ্বসে কাপ্তাইয়ে প্রান হারায় মোট ১৮ জন। পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে যায় শত শত একর ফসলি ক্ষেত, বিনষ্ট হয় বহু ঘরবাড়ী। সেদিনের কথা মনে করে কাপ্তাইয়ের জনগন এখনও শিহরিত হয়ে উঠে। কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসের ৫ বছর পার হলেও এখনও উপজেলার অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বিশেষ করে ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। এছাড়া ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া, রাইখালী ইউনিয়নের কারিগর পাড়া, তিনছড়ি, মিতিঙ্গাছড়িসহ দূর্গম অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে বহু পরিবার। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি হলে এদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হলেও এসব পরিবার গুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসন করা যায়নি। এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, উপজেলা প্রশাসন সব সময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সর্তক করে আসছে। অতিবৃষ্টি হলে আমরা এদেরকে নিকটস্থ স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে প্রানহানি না ঘটে। তিনি জানান, আমরা সবসময় কাপ্তাই, রাইখালী এবং ওয়াগ্গা ইউনিয়নে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আসছি যাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে।

 

৪ নং কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, প্রতিবছর বর্ষা আসলে আমরা অজানা আতংকে থাকি, বিশেষ করে তার ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। তিনি জানান, অতিবৃষ্টি হলে আমরা তাদেরকে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে এনে আশ্রয়ের ব্যবস্থাসহ তাদের খাবার পরিবেশন করে থাকি। কিন্ত এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়, তাই তিনি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে কোন নিরাপদ জায়গায় পূর্নবাসন করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান। কাপ্তাই জেলা নৌ স্কাউটসের জেলা স্কাউট লিডার এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, সেইদিন ২০১৭ সালের ১২ জুন দুপুর ২টার সময় যখন কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের শীলছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সে সময় সড়কের উভয় পাশে শত শত যান আটকে পড়ে, আমরা নৌ স্কাউটসের ৪০ জন সদস্য নিয়ে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হয়। এছাড়া পাহাড় ধসে নিহতের লাশ উদ্ধারে সহায়তা করি। ** ফাইল ফটোঃ কাপ্তাইয়ের মিতিঙ্গাছড়ি এলাকায় ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড় ধসে নিহতদের উদ্ধার কার্যক্রম এবং কাপ্তাই ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকাইয়া কলোনী।