পদ্মা সেতু কমাবে চাঁদাবাজি, প্রত্যাশা পরিবহন শ্রমিকদের

‘পদ্মা সেতু হলে আরিচায় কাউকে জোর করে নেওয়া যাবে না। ওখানে ট্রাকের জন্য অনেক টাকা চাঁদা দিতে হয়।

এতে অনেকসময় ফেরি ভাড়ার চেয়েও দ্বিগুণের বেশি খরচ হয়ে যায়’।
পদ্মা সেতু নিয়ে নিজের অনুভূতি এভাবেই প্রকাশ করছিলেন বরিশালের ট্রাক ড্রাইভার জামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগের যোগাযোগ সহজ হবে। আগে ধরেন চট্টগ্রাম দিয়ে পণ্য নিয়ে বরিশাল আসতে দুইদিন সময় লাগতো। আর ফেরিঘাটে ঠিকমতো টাকা না দিলে তিনদিনও লাগতে পারতো। কিন্তু এখন টোল ঘরে গাড়ি থামিয়ে নির্ধারিত টাকা দিয়ে চলে আসব। আর চাঁদাবাজি হবে না’।

পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন এক দিগন্ত। বিশেষ করে সেতুটি এই অবহেলিত অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাবে বলে বিশ্বাস করছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে ওপরতলার মানুষগুলোও। আর সেতু হওয়ার পর চাঁদাবাজির ভোগান্তি কমবে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

সবুজ নামে এক ট্রাক চালক বলেন, ‘আমরা যে ট্রাক চালাই তাতে বর্তমান ফেরি ভাড়া ১৪০০ টাকা হলেও ঘাট ফি, সিরিয়ালসহ নানান হিসাবে পদ্মার এপার থেকে ওপার যেতে দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ ১৪০০ টাকার বাইরে বেশিরভাগ টাকাই যায় মানুষের পকেটে। আর সেতুর টোল ২১০০ টাকা হলেও কাউকে সিরিয়ালের জন্য চাঁদা দিতে হবে না’।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের কারণে এখন মাওয়ায় বন্ধ হলেও আরিচা ফেরিঘাটে ঠিকই বাড়তি টাকা দিতে হয়। আর তা না দিলে কবে ফেরি পার হওয়া যাবে তা বলা যায় না। তাই মাছ ও কাঁচামালবাহী ট্রাকের লোকজন টাকা দিয়ে আগেই পার হয়। না হলে সব পচে যাবে, আর তখন সবার ভোগান্তি বাড়বে’।

বাস স্টাফ মান্নু বলেন, ‘এখন পদ্মা পার হতে যাত্রীবাহী বাসের লাগে ১৩৫০ টাকা। তবে আনুষঙ্গিক খরচসহ ১৬০০ টাকা খরচ করতে হয়। তবে পদ্মা সেতু হলে আনুষঙ্গিক খরচ লাগবে না’।

অ্যাম্বুলেন্স চালক আয়নাল হোসেন বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার সঙ্গে মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনাসহ আরও কয়েকটা জেলা আছে যেখান দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া সহজ। কিন্তু আরিচা হয়ে ঢাকা যাওয়াটা যেমন সময়ের ব্যাপার, তেমনি রাস্তাঘাট ভালো না হওয়ায় যানবাহন চালানো কঠিন। সব মিলিয়ে বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে ১০০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে যেমন বাড়তি ট্রিপ দেওয়া যাবে, তেমনি পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আয়ও বাড়ব’।