একটি অভূতপূর্ব উদ্ধার-অভিযানের গল্প …

আলম খোরশেদ এর ফেসবুক ওয়াল থেকে:: সম্প্রতি বাংলাদেশের জাহাজ-জগতে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছে। এমাসের গোড়ার দিকে তৈরী-পোশাকভর্তি সহস্রাধিক কন্টেইনারসহ একটি বিশালাকার ভিয়েতনামি জাহাজ এম. ভি. হায়ান সিটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেশিদূর না যেতেই কুতুবদিয়া চ্যানেলের মুখে আরেকটি তেলবাহী জাহাজের ধাক্কায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেটি প্রায় ডুবে যাবার উপক্রম হয়। ২০০ কোটি টাকা দামের জাহাজটি যদি সত্যিই ডুবে যেত তাহলে একই সঙ্গে জাহাজের আটশ কোটি টাকার পণ্যসমূহও জলে যেত সন্দেহ নেই। কিন্তু এর চেয়েও বড় ক্ষতি হতে পারত নিমজ্জিত জাহাজ ও তা থেকে সমুদ্রে ছিটকে পড়া সহস্রাধিক কন্টেইনারের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের গোটা প্রবেশপথটুকুই রুদ্ধ হয়ে গেলে।
কিন্তু তেমনটি হতে পারেনি অভিজ্ঞ ও অসম সাহসী, কর্মঠ ও মেধাবী এক নৌপ্রকৌশলীর অবিশ্বাস্য প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, দূরদর্শিতা ও কর্মকুশলতার দরুণ। তাঁর নাম মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার, যিনি ‘প্রান্তিক’ নামে একটি সুখ্যাত নৌ-প্রকৌশল ও নৌযান উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। তিনি দ্রুত তাঁর প্রধান উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রান্তিক সরওয়ার’সহ মোট সাতটি জাহাজ দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত সেই সুবৃহৎ জাহাজটিকে টেনে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে নিয়ে আসেন। এর জন্য তাঁকে কর্ণফুলী চ্যানেলের কিয়দংশকে নতুন করে ড্রেজিং পর্যন্ত করতে হয়েছিল।
এরপর তিনি দেশের প্রবীণতম আন্ডারওয়াটার ডাইভার, একানব্বই বছর বয়সী মোঃ আবদুল হালিমের নেতৃত্বে জনা ত্রিশেক ডুবুরিকে দিয়ে জাহাজের তলদেশে প্রায় তিনহাজার বর্গফুট আয়তনের একটি পুরু লোহার পাত জোড়া লাগিয়ে জাহাজের মূল ক্ষতস্থানটি ঢেকে দেয়ার উদ্যেগ নেন। পাশাপাশি দানবাকৃতি এক ক্রেনের মাধ্যমে জাহাজের খোলের ভেতর থেকে কন্টেইনারগুলোকে একে একে বার করে আনার কাজও চলমান রেখেছেন। এই কাজ শেষ হলে তাঁরা পাম্পের মাধ্যমে খোলের মধ্যকার জমা পানিটুকু সেঁচে, ভেতর থেকে ওই ক্ষত বরাবর আরেকখানি লোহার পাত ওয়েল্ডিং করে লাগিয়ে দিলেই জাহাজটি ফের চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠবে। সন্দেহ নেই এটি বাংলাদেশের নৌপ্রকৌশলের ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে একটি দৃষ্টান্তমূলক, প্রেরণাদায়ক এবং গর্ব করার মতো অর্জন হিসাবে চিহ্নিত হবে।

এমন অভূতপূর্ব এক অর্জনের জন্য তাই সর্বাগ্রে

অভিনন্দন

জানাই এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞের নায়ক, কর্মবীর জনাব গোলাম সরওয়ারকে। একইসঙ্গে অভিনন্দিত করছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়াশুনা শেষ করে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসা তাঁর দুই সুযোগ্য সন্তান, প্রান্ত ও বর্ষণকে, যারা সর্বক্ষণ তাদের বাবার পাশে থেকে এই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে তাঁকে মূল্যবান সহায়তা প্রদান করেছে। এবং বলাইবাহুল্য এই কাজে নেপথ্য থেকে ওদের সবাইকে অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছেন সারোয়ার-জায়া, প্রখ্যাত উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার নাসরিন সরওয়ার মেঘলা। তাকেও জানাই আমার আন্তরিক

অভিনন্দন।
তো, গতকাল বিকালে আমাদের সুযোগ হয়েছিল তাদের সেই সুবিশাল কর্মযজ্ঞখানি স্বচক্ষে দেখার। এখানে আগ্রহী বন্ধুদের জন্য আমাদের এহেন রোমাঞ্চকর এক ভ্রমণের নির্বাচিত কিছু স্থিরচিত্র প্রদর্শিত হলো, সেইসঙ্গে বিদায়বেলায় সারওয়ার-পরিবারের সাম্প্রতিক সংগ্রহ, দৃষ্টিনন্দন উদ্ধারকারী-জাহাজের কাঠের পাটাতনে বসে মাহীয়ার গাওয়া একখানা লাগসই রবীন্দ্রসংগীতের সচলচিত্রও।
শুভ রোমাঞ্চ।
(সম্পাদকের মন্তব্য: যদি উনি মাষ্টার মেরিনার না হয়ে থাকেন তবে রাষ্ট্রের উচিত ওনাকে সম্মান সূচক ভাবে ক্যাপ্টেন উপাধি দেয়া। বড় কাজের বড় স্বীকৃতি, কাজের জন্য প্রেরণা যোগাবে। রাষ্ট্রের উচিত প্রত্যেক কর্মবীরের ভালো একটা স্বীকৃতি দেয়া, এ ক্ষমতা রাষ্ট্রের রয়েছে)