নয় বছর ধরে একই দাবি জানাচ্ছি

‘নয় বছর ধরে একই দাবি জানাচ্ছি। আমরা হয়তো একসময় মরে যাবো, কিন্তু আমাদের দাবি আর পূরণ হবে না।

আমরা কি মানুষ না? আমাদের যারা মারা গেছে তারা কি মানুষ না? আর কত চিৎকার করলে সব দাবি পূরণ হবে? আমরা এখন বিরক্ত, তবুও আমাদের দাবি থাকবেই। ’
রোববার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে রানা প্লাজার ধসের স্থানে বেদীতে ফুল দিতে এসে এসব কথা বলেন রানা প্লাজার ঘটনায় নিহত মো. রাব্বির মা রাহেলা খানম।

ফুল দেওয়া শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাহেলা খানম। এ সময় তিনি বলেন, ‘রাব্বি ভবনের চার তলায় কাজ করতো। ঘটনার তিনদিন পর শার্ট দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করি। দেশের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশায় তাকে দাফন করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ছেলের স্মরণে আমি এখানে আসি। ’

তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার এক মাস আগে মারা যায় রাব্বি। আমার ছেলে অধ্যাপক হতে চেয়েছিল। তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আর কত বিচার চাইবো? কত ক্ষতিপূরণ চাইবো? নয় বছর ধরে একই দাবি জানাচ্ছি। ’

বকুল খাতুনের বোন সাগরিকা রানা প্লাজায় কাজ করতে এসে মারা যান ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল।

বকুল খাতুন জানান, ঘটনার মাত্র তিন মাস আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষে সাভারে এসেছিল তার বোন (সাগরিকা)। আর্থিক সংকটের কারণে নাটোর থেকে পরিবারের সঙ্গে চলে আসে সে। খালার সঙ্গে রানা প্লাজায় কাজে ঢোকে। কিন্তু ২৪ এপ্রিলের পর আর ফিরে আসেনি সাগরিকা। মৃত্যুর পর তার পরীক্ষার ফল প্রকাশ পায়। জিপিএ-৫ পায় সাগরিকা। কিন্তু নিজের ফলাফল জানা হয়নি তার।

 

বকুল খাতুন বলেন, ‘গ্রাম ছেড়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সাভারে আসা, প্রতিদিন সেই ঋণ শোধের পরিকল্পনা আর বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অবশেষে বোন হারানো। এখন আমরা বোনের দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি। ’

তিনি বলেন, ‘টাকা-পয়সা দিয়ে হারানোর বেদনা ভুলে থাকা যায় না। অনুদান বা ক্ষতিপূরণ হয়তো আর্থিক সমস্যা কিছুটা দূর করতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে শান্তি আনতে পারে না। ’

ভবন মালিক রানার বিচারের দাবিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার মতো আর কোনো ঘটনা যেন না ঘটে। এ ঘটনায় দোষীদের সবোর্চ্চ শাস্তি কামনা করি। কিন্তু নয় বছর ধরে এই দাবি জানালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। একই সঙ্গে রানা প্লাজায় স্মৃতিস্তম্ভ করা, ওইদিন সরকারি ছুটি দেওয়ারও দাবি জানাই। ’

শ্রমিক সংগঠনের নেতা অরবিন্দু খান বিন্দু বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি শ্রমিকদের এসব দাবি পূরণের জন্য। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। আমরা এখন বিরক্ত। আর কত বলবো? আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনরাসহ শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিরক্ত হয়ে গেছে। তবে আমরা হাল ছাড়বো না। এখনও দাবি জানাচ্ছি রানার দ্রুত বিচার ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। ’