এমপিও ভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন থেকে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০ শতাংশ কর্তনের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে সারা দেশে জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ
এমপিও ভূক্ত শিক্ষক কর্মচারিদের অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০ শতাংশ কর্তনের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সারা দেশে জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচী বৃহত্তর চট্টগ্রামেও পালিত হয়েছে। কেন্দ্রিয় কর্মসূচি পালনকল্পে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে উক্ত দিন সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি সৈয়দ লকিতুল্লাহর সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রনজিত নাথ। শিক্ষক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক শিমুল মহাজন ও যুগ্ম সম্পাদক মোঃ আলতাজ মিঞার যৌথ সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি নুরুল হক ছিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কানুনগো, সহ-সভাপতি আ.ক.ম শহীদুল্লাহ মানিক। আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বপন চন্দ্র সাহা, বিচিত্রা চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আবু বক্কর, সুভাস সরকার, মোঃ এহছান, মাহমুদুল হক, মোঃ জানে আলম, এম এ তাহেরুল ইসলাম, সৈয়দ মুহাম্মদ আজগর, রেজাউল হক, মোঃ সবুর, এম এইচ ওয়াইজ উদ্দিন, ডেইজী চৌধুরী, শুভ্রা দত্ত প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারক লিপিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সমস্যা ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়নের কথা উপলব্ধি করে অতীতের ন্যায় “৮ম জাতীয় পে-স্কেল’ প্রদান করে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে সমাদৃত হয়েছেন। বিলম্বে হলেও গত ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা প্রদান করে শিক্ষক-কর্মচারীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর অত্যন্ত আস্থাশীল ও কৃতজ্ঞ। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আরও উল্লেখ করেন ২৬১৯৩টি রেজিষ্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি প্রাথমিক শিক্ষার মত মাধ্যমিক শিক্ষাকেও জাতীয়করণ করা হলে প্রাথমিক শিক্ষার ন্যায় সকলের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এবং উচ্চ শিক্ষার দ্বার উম্মোচিত হবে। কিন্তু যখন সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এর লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা এবং ন্যায্য বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান, ঠিক তখনই শিক্ষক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা না করেই বিগত ১৫ জুন ২০১৭ কল্যাণ ট্রাস্ট এবং ২০ জুন ২০১৭ অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন থেকে ১০% কর্তনের পৃথক দু’টি অমানবিক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। যা সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে স্থগিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ১০% কর্তনের জন্য পুনরায় একটি আদেশ জারি করেন। সেটিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অসন্তোষের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব সোহরাব হোসাইন ভুল স্বীকার করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করে নেন। আবার তিনি গত ৯ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ অবসর সুবিধা বোর্ডের সভায় উপস্থিত সদস্যবৃন্দের সামনে অতিরিক্ত ৪% কর্তন না করার জন্য অভিমত পূনর্ব্যক্ত করেন। পরিতাপের বিষয় পূনরায় গত ১৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% সহ মোট ১০% কর্তনের জন্য মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কে লিখিত আদেশ প্রদান করেন। উক্ত আদেশের ফলে সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীগণ অত্যন্ত মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। নেতৃবৃন্দ আরও উল্লেখ করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তনয়া, শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব এবং শিক্ষানুরাগী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ আজ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। তাঁর নেতৃত্বে দেশ আজ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল। তাই আমাদের প্রত্যাশা, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ” এর লক্ষ্যে সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদানসহ এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০% কর্তনের প্রজ্ঞাপনটি বাতিলের জন্য নির্দেশনা দেবেন।