বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ১৭৮ বছরের পুরোনো পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের দাবি

“পটিয়ায় বিশাল মানববন্ধনোত্তর সমাবেশ ”

মধ্যযুগের অমর পুঁথি গবেষক মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, জে এম সেন হলের প্রতিষ্ঠাতা যাত্রা মোহন সেন, মুক্তমনা লেখক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ, বাংলার মুসলমানদের মধ্যে গণিতে প্রথম ডক্টরেট আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণিতবিদ ড. আতাউল হাকিম, আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুসহ অসংখ্য গুণী ব্যক্তিত্বের স্মৃতি বিজড়িত, পটিয়া মহকুমা তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামে বাংলা শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে খ্যাত, ১৭৮ বছরের পুরোনো পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের দাবি তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, অভিভাবক, প্রাক্তণ ছাত্রসহ সচেতন নাগরিক সমাজ।
গতকাল রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে পটিয়া মডেল হাই স্কুল গেইটের সামনে এক মানব বন্ধন ও সমাবেশে বক্তরা এ দাবি জানান। প্রাশিপ সভাপতি ডাঃ সৈয়দ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মাস্টার চন্দন কান্তি নাথ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও পটিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলমগীর আলম, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুনিল কুমার বড়–য়া, মুক্তিযুদ্ধা গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য শৈবাল বড়–য়া, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য দেবাশীষ দাশ, উপজেলা সিপিবি সভাপতি অলক দাশ, নজরুল ইসলাম, মাস্টার শ্যামল দে, পটিয়া পৌরসভা বিএনপি নেতা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পৌরসভা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দিকী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আহমদ কবির, আরফ আলী চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বিপ্লব, বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, আবদুল হাফেজ, লিটন চৌধুরী, রুমা চক্রবর্ত্তী, প্রাশিপ সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাশ, প্রাশিপ সদস্য সাজ্জাদ সুমন, সাংবাদিক আহমদ উল্লাহ, রবিন দাশ, রুবেল দাশ বাবু, রাফিউল আকরাম আলভী, তৌহিদুর রহমান আরফাত, সাকিব ই মাহমুদ, মারুফ আলম, শিবু মল্লিক প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্টিত হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামে বাংলা তথা ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রেখেছে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। পটিয়ায় প্রথম ডিগ্রি কলেজ (বর্তমানে পটিয়া সরকারি কলেজ) প্রতিষ্ঠার পেছনেও পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আড়াই একর জায়গাটি পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দানকৃত বলে বক্তারা বলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে কলেজটি সরকারিকরণ হয়।
পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেই (পটিয়া স্কুলের মাঠ খ্যাত) ১৯৪৩ সালে ভারতের পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু জনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ১৯৭০ এবং ৭৩ সালে দু’বার পটিয়া স্কুলের মাঠে লক্ষাধিক লোকের জনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন।
একইভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ১৯৯৬ সালে এবং ২০১৮ সালের ২০ মার্চ এই মাঠেই ভাষণ দিয়েছিলেন। সমাবেশে এ ধরণের শত শত ঐতিহাসিক কার্যক্রমে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। বক্তারা আরও বলেন, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় বিভিন্ন সরকারের আমলে অবহেলা, অবজ্ঞা ও বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষত স্বাধীনতাউত্তর বিগত ৫১ বছরে প্রশাসনের তরফ থেকে কয়েকবার পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের উদ্যোগ নেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আবদুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে ১৯৮১ সালে সরকারিকরণ করা হয়। পটিয়াবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরণের।
রাজনৈতিক জটিলতা এবং বিরোধিতার কারণে সম্ভব হয়নি। পটিয়াতে হাই স্কুল জাতীয়করণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হলে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ই এর যোগ্য দাবিদার। শিক্ষার মান ও পরীক্ষার ফলাফলের দিক থেকেও আশেপাশের অন্য হাইস্কুলগুলো গত ১০ বছরে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ধারেকাছেও নেই বলে দাবি করা হয়। তাই অবিলম্বে প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করার দাবী জানানো হয়।