মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে মারিউপোল

মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে মারিউপোল। সেখানে কমপক্ষে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। তাদের বিদ্যুৎ নেই। নেই অন্য কোনো মৌলিক চাহিদার জোগান। ওদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলোচনা হওয়ার সম্ভাব্যতা প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যতক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে খুব কাছাকাছি না হচ্ছে তখন এ আলোচনা পাল্টা ফল দিতে পারে। তিনি আরও বলেছেন রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক এখন সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পুনর্বার বিরোধিতা প্রকাশ করেছে চীন।

এর পরই ল্যাভরভ ওই মন্তব্য করেন। মস্কোর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বেইজিং। যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা হিসেবে বার বার পুতিনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছেন জেলেনস্কি। কিন্তু রাশিয়া থেকে সে বিষয়ে সাড়া মিলছে না। এ অবস্থায় ইউক্রেন মানব করিডোর দিয়ে বেসামরিক লোকজনকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ‘প্ররোচণা’মূলক হুমকির কথা বলেছে ইউক্রেন। তা সত্ত্বেও ইউক্রেন বলেছে- তারা নিরপেক্ষ মর্যাদা অর্জনের জন্য আলোচনায় প্রস্তুত। সব দিকই খতিয়ে দেখছে ক্রেমলিন। তারা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা মন্তব্য ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। বাইডেন বলেছেন- পুতিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নতুন করে কথার লড়াই শুরু হয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। এ নিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, বাইডেনের এমন মন্তব্য উদ্বেগজনক। এরপর বাইডেনের সব বিবৃতি ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করবে মস্কো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সহ হোয়াইট হাউস থেকে বাইডেনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী পরিবর্তনের কথা বলেননি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্সিয়াল এক সহযোগী জানিয়েছেন ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চোরনোবাইভকায় রাশিয়ার বাহিনী ১২তম বারের মতো পরাজিত হয়েছে। তারা সেখানে কৌশলগত একটি বিমানবন্দর দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। এই বিমানবন্দরটি বেদখলে যাওয়া খারসন এবং মিকোলায়েভ শহরের মধ্যবর্তী একটি স্থান। এটাকে ইউক্রেনের প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
যেকোনো রকম মানব করিডোর সোমবার উন্মুক্ত রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশ্চুক। দেশটির উপ- প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। তবে তারা সামনে এগুতে পারছে না। তারা রাজধানী কিয়েভের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলেও রাজধানী দখলে নেয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো বলেছেন বেসামরিক লোকজনকে নিয়ে উদ্ধার অভিযানে অপেক্ষায় ছিল ২৬টি বাস। কিন্তু তাদেরকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি রাশিয়ার সেনারা। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে খেলা করছে রাশিয়ান ফেডারেশন। জবাবে বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। উল্টো তারা ইউক্রেনকে দায়ী করছে। বলছে, আটকে পড়া বেসামরিক লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে একমত হতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে ইউক্রেন।
ওদিকে রাশিয়ায় কর্মকাণ্ড গুটিয়ে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান হেইনেকেন। এর আগে তারা রাশিয়ায় নতুন বিনিয়োগ এবং রপ্তানি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। ওদিকে ইউক্রেনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, তুরস্কে কিয়েভ এবং মস্কোর প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় ভালো কোনো রেজাল্ট আশা করা যায় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ভাদিম ডেনিসেঙ্কো এ কথা বলেছেন। ওদিকে দক্ষিণের লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার বোমা হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। এই শহরের অংশবিশেষ ২০১৪ সাল থেকে ক্রেমলিনপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।