ইউক্রেনজুড়ে রুশ হামলা অব্যাহত

ইউক্রেনজুড়ে রুশ হামলা অব্যাহত। শিশুদের নার্সারি স্কুল থেকে হাসপাতাল, বসতবাড়ি থেকে অফিস বিল্ডিং- রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ইউক্রেনের কোনো স্থাপনাই। তবে যেকোনো মূল্যে কিয়েভ রক্ষার প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা। ইউক্রেন সরকারের কাছ থেকে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনের বলি হয়েছেন অন্তত দুহাজার সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই অন্তত নয় লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই প্রথম ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে তাদের পক্ষের হতাহতের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে। রাশিয়ার মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত ৪৯৮ জন রুশ সেনা মারা গেছে, আহত হয়েছে ১৫৯৭ জন। ইউক্রেন রুশ সৈন্য হতাহতের যে সংখ্যা বলেছে রাশিয়ার দেওয়া সংখ্যা তার চেয়ে কয়েকগুণ কম। কিয়েভ দাবি করেছে ইউক্রেনের সৈন্যরা ৫৮৪০ জন রুশ সৈন্যকে হত্যা করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, লড়াইতে তারা ইউক্রেনের ২৮৩০ জনেরও বেশি সৈন্যকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে ৩৭০০। রাশিয়া বলছে ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর খেরসান এখন তাদের দখলে, যদিও শহরের মেয়র এই দাবি মানেননি।
গতকাল বুধবার সকালের দিকে পাকিস্তানি নাগরিক শহরের বাসিন্দা হুসেইন, যিনি তার স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে একটি আ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করেন যাতে দেখা যায় তাদের ভবনের সাথে লাগানো রাস্তায় রুশ ট্যাংক দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং রাস্তায় রুশ সৈন্যরা টহল দিচ্ছে। পাকিস্তানি ওই নাগরিক বলেন, জানলা দিয়ে তিনি দেখেছেন রুশ সৈন্যরা লোকজনকে সতর্ক করতে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে এবং মানুষজন ছুটে পালাচ্ছে। তিনি বলেন, দৃশ্যটি ছিল চরম ভীতিকর এবং জীবনে এমন ভয় তিনি পাননি। হুসেইন বলেন, শহরে দোকানপাট বন্ধ এবং তার খাবারদাবার শেষ হওয়ার পথে। ঘরে কিছু চাল, বিনস, কিছু আলু ও টমেটো অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, মেয়ের খাবারে যেন টান না পড়ে সেজন্য তিনি এবং তার স্ত্রী খুবই কম খাচ্ছেন। আমি জানি না লড়াইতে কত মানুষ মরবে কিন্তু খিদেয় অনেকে নিশ্চিতভাবে মরবে।
এদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর খেরসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার যে দাবি বুধবার রাশিয়া করেছে তা অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। ‘শহরটির এখনও পতন হয়নি। আমরা এখনও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছি,’ প্রেসিডেন্ট জেলনস্কির উপদেষ্টা ওলেঙি আরেস্টোভিচকে উদ্ধৃত করে বলছে রয়টার্স বার্তা সংস্থা। তবে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে খেরসনের রাস্তায় রুশ সৈন্যরা টহল দিচ্ছে। দক্ষিণের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর মারিওপোলে রুশ সৈন্যরা ঘিরে ফেলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। মারিওপোলের মেয়র বলেছেন, রাতভর রুশ গোলাবর্ষণে প্রচুর বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য তিনি কোনো সংখ্যা বলতে পারেননি।
ওদিকে রাজধানী কিয়েভ থেকে বিবিসির একজন সংবাদদাতা বলেছেন শহরে সকাল থেকে একধরনের ভীতিকর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। কিয়েভের মেয়র বাসিন্দাদের সতর্ক করেছেন রুশ সৈন্যরা শহরের দিকে এগুচ্ছে। তিনি তাদের ঘরে থাকতে এবং প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ‘শত্রু ক্রমেই কাছে চলে আসছে,’ বলেন মেয়র ভিতালি ক্লিচকো। ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি কীভাবে কিয়েভকে রক্ষা করব। আমি কিয়েভের মানুষদের বলছি তারা যেন সাহস না হারান।’
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে যে, ইউক্রেনের খারসন শহর তারা দখল করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে রাশিয়ার সৈন্যরা পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছে কিনা সেটি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খারসন অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, রাশিয়ার সৈন্যরা সে এলাকা ঘিরে রেখেছে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার বোমা হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার সকালে যুদ্ধবিরতি নিয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে অংশ নিতে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে রওয়ানা হয়েছেন। রাশিয়ার পক্ষে প্রধান মীমাংসাকারী ভ্লাদিমির মেদনিস্কি রুশ মিডিয়াকে বলেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা কিয়েভ থেকে রওয়ানা হয়েছেন এবং রুশ সৈন্যরা তাদের জন্য একটি নিরাপত্তা করিডোর নিশ্চিত করছে।
এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণে রাশিয়া প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি বলেন, বিভিন্ন মারণাস্ত্রের একটি তালিকা করা হয়েছে যেগুলো কখনই ইউক্রেনে মোতায়েন করা যাবে না। লাভরভ বলেন, পুতিনের সরকার ইউক্রেনের জনগণের নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার স্বীকার করে এবং ভলোদোমির জেলেনস্কিকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতে রাশিয়ার কোনো অসুবিধা নেই।