শাহাদাতের আসল খুনি গ্রেপ্তার, জেল খাটছে নিরপরাধ জাহিদ

সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে ঢাকার ধামরাইয়ের শাহাদাত হত্যার ঘটনা। আসল খুনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও বন্ধুকে খুন না করেও ৬ মাস ধরে জেল খাটছে বন্ধু। সম্প্রতি র‌্যাব ছায়া তদন্তের মাধ্যমে আসল খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা খুন করার কথাটি স্বীকার করেছেন বলে র‌্যাব জানিয়েছেন।

বিনা দোষে জেল খাটা যুবক জাহিদের বাবা জানিয়েছেন, পুলিশের সঠিক তদন্তের অবহেলায় নিরপরাধ আমার সন্তান জেল খাটছে। শুধু তাই নয় তাকে রিমান্ডে এনে ব্যাপক মারধরও করা হয়েছে।
জানা গেছে, ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমড়াইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের একমাত্র ছেলে শাহাদাত হোসেন (২৪) গত ২ আগস্ট নিজ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিখোঁজ হন। এরপর ৮ই আগস্ট পাশের কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার পরিবার। ১২ই আগস্ট ধামরাইয়ের আমড়াইল গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ভিটায় গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় শাহাদাত হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

এ ঘটনায় নিহতের বাবা ধামরাই থানায় হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করেন। এরপর প্রায় দেড় মাস পর গত ২২শে সেপ্টেম্বর শাহাদাত হোসেনের মৃত্যুর ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পান ধামরাই থানা পুলিশ। প্রতিবেদনে জানা যায়, শাহাদাত হোসেন আত্মহত্যা করেনি, তাকে শ্বাসরোধে ও পিটিয়ে ও একটি চোখ উপড়ে হত্যার পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধামরাই থানার এসআই সেকেন্দার আলী সঠিত তদন্ত না করেই সন্দেহজনকভাবে একই গ্রামের শাহাদাত হোসেনের বন্ধু জাহিদুল ইসলাম জাহিদকে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে জাহিদ হত্যার কথা স্বীকার না করায় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে।

পরে র‌্যাব ওই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল সম্প্রতি সাভারের আশুলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (২২), তার বন্ধু আবু তাহের (২৪), সবুজ হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার করে।

নিরাপরাধ অপর জাহিদের বাবা শাজাহান পীর জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তা সঠিক তদন্ত করলে আজ আমার নিষ্পাপ ছেলে জেল খাটতে হয় না। আমি গরিব টাকা দিতে না পারায় আমার সন্তান এখনও জেলে। তিনি র‌্যাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, পুলিশ না করলেও র‌্যাব ঠিকই খুনিদের গ্রেপ্তার করেছেন। এখন তিনি তার সন্তানের দ্রুত মুক্তি কামনা করেন। এদিকে, গ্রামবাসীরা দ্রুত প্রকৃত খুনিদের ফাঁসি দাবি জানান।

তৎকালীন সময়ের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সেকান্দার আলী জানান, বাদীর অভিযোগের ভিক্তিতেই খুন হওয়া শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।