বিনা তেলেও সুস্বাদু খাবার

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। সংবাদপত্রের পাতায় ছাপা হয়েছে পলিব্যাগে করে তেল কিনে ঘরে ফেরা মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছবি। তবে মানুষ সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই কিন্তু এত সহস্র বছর ধরে টিকে আছে। চাইলে কম তেলে, এমনকি বিনা তেলেও সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়। আর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সে ধরনের খাবারই শরীর আর মানিব্যাগ— উভয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর
বিনা তেলেও রাঁধা যায় পাবদা, ইলিশ, পাঙাশ

যুগ যুগ ধরে জাপানি, চীনা, থাই ইত্যাদি দূরপ্রাচ্যের খাদ্যসংস্কৃতিতে খুব সামান্য তেলেই অসামান্য সব সুস্বাদু খাদ্য রান্না হয়। যেকোনো মাছ শুধু তেলে ঝোলে না রেঁধে ভাপিয়ে স্টিমড ফিশ করা যায়। আস্ত মাছ পরিষ্কার করে ছুরি-বঁটির সাহায্যে কিছু পোঁচ দিতে হবে। এবার ভালোভাবে সয়া সস, লাল মরিচের ফ্লেক্স, চিলি সস, সামান্য আদাবাটা দিয়ে ভেতরে-বাইরে ভালো করে মাখিয়ে তার পেটে লেবুর স্লাইস, আদাঝুরি আর কুচি করা পেঁয়াজের কলি ভরতে হবে। একটি স্টিলের ছড়ানো পাত্রে নিয়ে চুলায় বা রাইস কুকারে ২০-২৫ মিনিট ভাপিয়ে নিয়ে ওপরে রসুনকুচি ভাজা তেল ছড়িয়ে নেওয়া যায়। এ ছাড়া পছন্দমতো মসলা মেখে গ্রিল করে নেওয়া যায় তেল ছাড়াই। পাবদা, ইলিশ, পাঙাশ মাছ নিজেই তেল ছাড়ে। তাই বিনা তেলেও রাঁধা যায় এই মাছগুলো।
যেকোনো সবজি সেদ্ধ করে অল্প তেলে ফোড়ন দিন

সবজির পদে এমনিতেও শুধু তেলে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলোর সম্পূর্ণ শোষণের স্বার্থে সামান্য তেল দিলেই হয়। যৎসামান্য জলপাই তেল বা মাখন দিয়ে নেড়েচেড়ে ভেজে নেওয়া যায় কপি, ব্রকলি, লাউ, পেঁপে, চিচিঙ্গা, বরবটি, শিম, গাজরসহ সব রকম সবজি। কাঁচা সালাদে খাওয়া যায় শসা, টমেটো, গাজর, বিট, বাঁধাকপি, পেঁপে, মুলাসহ অনেক সবজি। শাকভাজি অত্যন্ত কম তেলে সবুজ থাকতেই নামিয়ে খেয়ে নেওয়াই শ্রেয়। যেকোনো সবজি সেদ্ধ করার পর এক চামচ তেলে রসুন-পেঁয়াজকুচি ও পছন্দমতো কালিজিরা, জিরা, পাঁচফোড়ন বা জোয়ানের ফোড়ন দিলে খুবই সুস্বাদু হয়। বিদেশি রেসিপিতে স্যুপ বা স্টু ছাড়াও আমাদের মণিপুরি চামফুৎ (স্যুপের মতো করে সেদ্ধ করা সবজির ঝোল), পালটৈ (ভাপানো বা টালা সবজির ভর্তা), চাকমা সমাজে প্রিয় তেলবিহীন তাবা সবজি, পাজন ইত্যাদি পদও কিন্তু চমৎকার লাগে ভাতের সঙ্গে।
প্রায় সবকিছুরই খাওয়া যায় ভর্তা

ভর্তা করে খেলে বেশির ভাগ খাদ্য উপকরণই তেল ছাড়া বা সামান্য শর্ষের তেল ছড়িয়ে খাওয়া যায়। যেকোনো মাছভর্তা খুবই উপাদেয় ও পুষ্টিকর। ভর্তা করা যায় মাছ বা গরুর মাংসের শুঁটকি। আলু, বেগুন, টমেটো, পেঁপে, ব্রকলি, শিম, ঢ্যাঁড়স, সবজির খোসা বা বীজ—ভর্তা করা যায় সবকিছুই। তেলবিহীন এই পদ পাতে থাকলে থালের পর থাল ভাত অদৃশ্য হয়ে যাবে। ডাল চচ্চড়িতে বা ডাল বিরানে তেল একেবারে কমিয়ে দিলেও স্বাদ অটুট থাকে। তেমনি যেকোনো ডাল হলুদ-লবণ-পেঁয়াজ দিয়ে ফুটিয়ে বিনা সম্ভারে টমেটো, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ দিয়ে নামালেও গরম ভাতে ভারি উপাদেয়।
মাংস খেতে পারেন গ্রিল, বেক বা স্টেক করে

রেড মিট বা গরু-খাসির নিজস্ব ফ্যাটই যথেষ্ট। একেবারে তেল-পেঁয়াজ ছাড়া রান্না বসিয়ে শেষে মাংসে পেঁয়াজ বাগার দিলে অন্য রকম স্বাদ আসে। এ ছাড়া মাংস গ্রিল করে খাওয়া যায়, বেক করেও। স্টেক তো এখন খুবই প্রিয় দেশীয় খাদ্যরসিকদের কাছে। প্যানে সামান্য মাখন ব্রাশ করেই বানানো যায়। চিকেন স্টুর মতো মুরগি-সবজির ঝোল করা যায় প্রায় বিনা তেলেই।
তেল ছাড়া বানানো হয় এই স্ন্যাকসগুলো

এবার আসা যাক বিকলে সন্ধ্যায় মুখরোচক খাবারের কথায়। দেশি চাপটি, ছিটারুটি, খোলাজালি পিঠা, ভাপা, চিতই, ম্যারা পিঠা—বিনা তেলেই বাজিমাত করে আসছে যুগ যুগ ধরে। টেলে বা পুড়িয়ে নেওয়া মিষ্টিআলু, শুকনা খোলায় ভাজা বাদাম, চালভাজা, মুড়ি, মটরশুঁটি, কুমড়োবিচি, ভুট্টার খই—তেলের কোনো কারবারই নেই। চটপটি, মটরের ঘুগনি, ছোলার চাট আর সবজির স্যুপও চলতে পারে নিশ্চিন্তে।