১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল, মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সংগঠিত হয় চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সব অহংকার চূর্ণ করে ৪ দিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। তাদের সেই অসীম সাহস ও আত্মত্যাগ পরবর্তীতে পুরো ভারতবর্ষে স্বাধীনতার সংগ্রামকে বেগবান করে। সেই যুব বিদ্রোহের ৮৯ তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে আজ ২০ এপ্রিল ২০১৯ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যুব সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল শিকদারের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক কানাই লাল দাশ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, শেখ আব্দুল মান্নান ও মোঃ আমির হোসেন। বক্তারা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী যুব বিদ্রোহের অনুপ্রেরণাই পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছিল। সাম্রাজ্যবাদী শোষণ হতে ভারতীয় উপমহাদেশকে মুক্ত করতে মাস্টার দা সূর্যসেন লড়াই করেছেন। যে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মাষ্টারদা’ সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়েছিল, সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখনো পৃথিবীর দেশে দেশে হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অতীত সংগ্রামের স্মৃতিস্মারক “চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবস” মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা জোগায়।
সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক জালালাবাদ পাহাড়টি সেনাবাহিনী থেকে অধিগ্রহণ করে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার এবং সেখানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তসহ যুব বিদ্রোহের মহানায়কদের স্মরণে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের নামকরণ করারও দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিপতিদের অর্থনৈতিক শোষণ ও লুটপাটের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গরিব হচ্ছে। দেশীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া এবং শিক্ষার ব্যয় সংকোচন নীতি মানুষকে অর্থনৈতিক বৈষম্যের মুখোমুখি করছে। দেশের যুব সমাজ আজ সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার। ভোগবাদিতা ও অবক্ষয়ের এই সময়ে তরুণদেরই চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের চেতনা ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে শোষণ বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
আলোচনা সভা শেষে আবৃত্তি পরিবেশনা করে প্রমা আবৃত্তি সংগঠন এবং গণসংগীত পরিবেশন করে প্রবর্তক সংঘের শিক্ষার্থী, রংতুলি খেলাঘর আসর ও সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন।