আলোচনার কেন্দ্রে পরীমণি

করোনা মহামারির কারণে বছর জুড়ে সংস্কৃতি মঞ্চগুলো স্থবির হয়ে থাকলেও বিনোদন জগৎ সারা বছরই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বছরের সবচেয়ে আনন্দের ঘটনা ছিল কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহেনা মরিয়ম নূর’-এর অফিশিয়াল সিলেকশন। বাংলাদেশের সিনেমা বিশ্বের আঙিনায় দর্শক ও চিত্রসমালোচকদের প্রশংসায় ভেসেছে। ছবিটি পরে অস্কারের প্রাথমিক তালিকায় স্থান করে নেয়। এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহেনা মরিয়ম নূর’ ও তরুণ নির্মাতা মোহাম্মদ রাব্বি মৃধার প্রথম চলচ্চিত্র ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’ অংশগ্রহণ। একসঙ্গে দেশের তিনটি চলচ্চিত্রের একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও এইবার প্রথম। দেশের চলচ্চিত্রের যখন দুর্দিন চলছে তখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে। সুদিনের আভাস দিচ্ছে এ প্রজন্মের চলচ্চিত্রকাররা।

তবে, এই সবকিছুকেই চাপা দিয়েছে পরীমণি ইস্যু। পরীমনির রাতের বেলা বোট ক্লাবে যাওয়া-পরবর্তী সময়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা। আরো পরে র‌্যাবের অভিযানে পরীমণি গ্রেফতার সবকিছুতেই পুরো দেশ আলোড়িত হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, পরীমনিকে দফায় দফায় রিমান্ড এবং উচ্চ আদালতের রিমান্ড প্রশ্নে রুল জারি ঘটনাটকে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত করে। এরপর পরীমণির জামিন হলে জেলগেট থেকে মুক্তির সময় তার হাতের লেখাও আলোচনায় তুঙ্গে ওঠে। পরীমণি ছাড়াও রাজ, মৌ, পিয়াসার গ্রেফতারও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল গত বছরটা।

এদিকে, বছরের শুরুতে লকডাউনের প্রভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন প্রায় বন্ধই ছিল। এরপর বইমেলা মার্চে শুরু হলেও করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে শুরু করলে মেলা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এরপর আগস্ট থেকে অনুষ্ঠান আয়োজন মঞ্চে গড়ালেও মূলত অক্টোবর মাসে এসে গতি পেয়েছে সংস্কৃতিচর্চা। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের মাধ্যমে শুরু হয় এই গতিময়তা। মঞ্চনাটক, নৃত্যনাট্য, সংগীতাসর, আবৃত্তিসহ শিল্পের অনেকগুলো শাখার সম্মিলনে মোহময় রূপে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে এ উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার তিন মিলনায়তনসহ, সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন এবং মুক্ত মঞ্চের অনুষ্ঠান বৈচিত্র্য ছড়ানো ১২ দিনের উৎসবে শামিল হয়েছে হাজারও শ্রোতা-দর্শক। এর আগে জুলাইতে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী হলেও করোনার করাঘাতে সরাসরি আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে পারেননি শিল্পরসিকরা। ভাচু‌র্য়ালি উপভোগ করতে হয়েছে এই সারা দেশের শিল্পীদের সম্মিলনে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনী। তবে মহামারির ধকল কাটিয়ে চাঙা হওয়া সংস্কৃতিচর্চা সর্বোচ্চ গতি পেয়েছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে উপজীব্য রঙিন রূপ পেয়েছে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন। পয়লা ডিসেম্বর থেকে হাতিরঝিলের উন্মুক্ত মঞ্চে ‘বিজয়ের ৫০ বছর : লাল সবুজের মহোত্সব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এফবিসিসিআই। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান আয়োজনটি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে রাজধানীবাসীর।

স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নজরুল উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, নৃত্য উৎসব, লোকসংগীতের আসরসহ বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায় হূদয় কেড়েছে নগরীর শ্রোতা-দর্শকের। বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে দর্শক মাতিয়েছেন চলচ্চিত্র তারকারা। ডিসেম্বরে শিল্পকলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোত্সব। শিল্পকলার চিত্রশালায় চলছে সারা দেশের শতাধিক ভাস্করের গড়া ১১৪টি ভাস্কর্যের সম্মেলনে জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আড়ম্ভরপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় আয়োজন।