সুবিধা বঞ্চিতদের বিনামূল্যে টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ প্রদান একটি মহতি উদ্যোগ : মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, নগরীর মোট জনসংখ্যার ৪০শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে। প্রতি বছর চট্টগ্রাম শহরে বাস করতে আসা পাঁচ লক্ষ মানুষের অধিকাংশই বস্তিতে বসতি স্থাপন করেন। যেখানে তারা অনেক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। যার মধ্যে পানি ও সেনিটেশন অন্যতম। নগরায়নের ফলে গ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্তের কর্মমুখী মানুষকে প্রয়োজনের তাগিদে শহরে আসতে হয়। এসময় কর্মমুখী এসকল মানুষদের শৌচকর্মের প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষভাবে নারী ও প্রতিবন্ধীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এজন্যই নগরীর সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনে চসিক গণ শৌচাগার ব্যবহার বিনামূল্যে করে দেয়া হয়েছে। নগরীর ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা এই সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, পয়: পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এনজিও সংস্থা ডি.এস.কে’র সহায়তায় চসিকের ৭টি গণশৌচাগারে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। সুবিধা বঞ্চিতদের বিনামূল্যে টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ প্রদান একটি মহতি উদ্যোগ। আজ সোমবার সকালে আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনে কে.বি. আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে ভাসমান জনসাধারণের বিনামূল্যে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের জন্য এক্সেস কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ডি.এস.কে’র পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও আরাফাতুল জান্নাতের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক এ.এস.এম শাহেদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, কাউন্সিলর হাজী নুরুল হক, ওয়াটার এইড’র পরিচালক হোসেন ইশরাত আদিব প্রমুখ।
মেয়র আরো বলেন, যে-কোন আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরীতে সরকারী সংস্থার পাশাপাশি নাগরিক সমাজের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য। আমাদের সমাজের এই বিষয়টির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হুমকি স্বরূপ। এত নানা ধরণের সংক্রমণ রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরী ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে যথেষ্ট সুন্দর ও সমৃদ্ধ। এই নগরীর সৌন্দর্যবর্দ্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আইল্যান্ডে যে-সকল গাছ গাছালী রয়েছে সেগুলো পরিচর্যা ও পানি ছিটানো হচ্ছে। সবুজায়ন ও প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশ নাগরিকদের জন্য স্বস্তিদায়ক করে তুলতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি নগরবাসীকে নিজস্ব বসতের আঙ্গিনায় গাছ-গাছালী রোপন ও ছাদ বাগান করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই উদ্যোগে চসিক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। তিনি শহরে ভাসমান প্রায় ১৫লক্ষ মানুষের সুবিধার্থে চসিক আরো পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে এর মাধ্যমে শহরের ভাসমান মানুষগুলো টয়লেট, গোসল ও সুপেয় পানি পানের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে জানান।
উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে বলেন, মানুষের জন্য মানুষ এই ধারণা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে এবং সুবিধা বঞ্চিতদের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি সাবেক মেয়র এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের সেবক নাম দিয়ে মর্যাদা দেয়ার ফলে নিজের উদারতা প্রকাশ করেছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়া পাবলিক টয়লেটের স্থলে পাবলিক কমফোর্ট জোন নামকরণের প্রস্তাব পেশ করেন।
প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করছি। সে চেতনাকে লালন করা এবং প্রজন্মের কাছে ধারণ করতে মন-মানসিকতা তৈরী করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান শেষে মেয়র সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে টয়লেট এক্সেস কার্ড বিতরণ করেন।