কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা নেই

কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর ফলে কর্ণফুলীর যে অংশে অবৈধ স্থাপনা আছে সেটুকু অপসারণ করতে আর কোন বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের দায়ের করা আবেদন খারিজ করে সোমবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের পক্ষে আজ শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস ও এএম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল।

ওই রিটের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে একটি জরিপ প্রতিবেদন দিয়েছিল। সেখানে প্রায় ২১শ অবৈধ স্থাপনা ছিল। এরপর ২০১৬ সালে একটি রায় হয় যেখানে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

তিনি বলেন, ওই রায়ের আলোকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত ৬ ফেব্রুয়ারি চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে স্থগিতাদেশ চাই।

আজ তাদের ওই আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের আবেদন ডিসমিস (খারিজ) করে দেন। এরফলে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের যতটুকু জায়গায় নদীর অংশে পড়েছে সেটুকু ভাঙতে আর কোন বাধা নেই।

নজিল মোরসেদ বলেন, আপিল শুনানির সময় তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, নদীর মধ্যে তাদের কোনো অবৈধ জায়গা নেই। তাদের ভবন না ভাঙতে নির্দেশনা চান।

তবে তার বিরোধিতা করে আমরা আদালতে বলেছি, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাদের কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নাই। জরিপে যতটুকু এসেছে। ততটুকুই ভাঙবে। তার বেশি ভাঙার কোনো সুযোগও নাই। আদালত শুনানি শেষে তাদের আবেদনটি খারিজ করে করে দিয়েছেন।

এদিকে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত ৯ এপ্রিল নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দরের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ দখল সংক্রান্ত খবর ২০১০ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে।

ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট আদালত কর্ণফুলী নদীর তীরে থাকা দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা সরানোর পাশাপাশি রায়ে ১১ দফা নির্দেশনা দেয়।

এ রায়ের অনুলিপি বিবাদীদের কাছে পাঠানো হলেও সংশ্নিষ্টরা তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে গত বছর ২৫ জুন সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশও পাঠানো হয়। কিন্তু বিবাদীদের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে তাদের আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।

সে আবেদনের শুনানি শেষে গত বছর ৩ জুলাই আদালত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন না করায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে। এরপরই জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।