বোয়ালখালীতে মামীকে ধর্ষনের দায়ে বিয়ের কাজীর বিরুদ্ধে মামলা

বোয়ালখালীতে বিয়ের পর এক গৃহবধুর ঠাঁই হয়েছে রান্না ঘরে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারে বেড়ে উঠা ওই তরুণী গৃহবধুর পরিবার মেয়ের সুখের আশায় বিয়ে দেয় এক প্রবাসীর কাছে। যেখানের স্বামীর ভালবাসা পাওয়ার কথা ছিল,সেখানের স্বামীর ভাগ্নের লালসার শিকার হতে হয়েছে অসহায় ওই গৃহবধুকে। অবশেষে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে বাদী হয়ে মামলা করেছেন ওই গৃহবধু। গত ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বোয়ালখালী থানায় ওই গৃহবধু নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলা দায়ের করেছেন।

ওই গৃহবধু জানায়, গত ২০১৮ সালের ২৬ মে একদিনের কথায় উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকুবদন্ডী গ্রামের আবু তাহেরের সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের দিন আবু তাহের একই গ্রামের তার বোনের বাড়িতে নিয়ে যায়। স্বামীর বোনের বাড়ির রান্না ঘরে ঠাঁই হয় তার। এর ৮দিনের মাথায় আবু তাহের বিদেশে পাড়ি জমান।

বোনের বাড়ির গরুর ঘাস কাটা থেকে শুরু করে ঘরের সমস্ত কাজকর্ম তাকে দিয়ে করানো হতো। স্বামীর সাথেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না তাকে। এর ২০১৮ সালের ১০ জুন স্বামীর ভাগ্নে কাজী আবদুল জলিল রাত ১১টার দিকে রান্না ঘরে জোরপূর্বক শারীরিক সর্ম্পক গড়েন। এ বিষয়ে শোর চিৎকার করলে বাড়ির সবাই আবদুল জলিলের পক্ষ নিয়ে গালমন্দ করে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এরপর থেকে দফায় দফায় বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে আসছিল। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রাতে শারীরিক সর্ম্পক করেন। এরপরদিন মায়ের সাথে দেখা হলে ঘটনার বিষয়ে জানায়।

স্থানীয় জানায়, মেয়েটির বাবা দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতো। এক দূর্ঘটনায় তিনি পঙ্গু হয়ে পড়লে মেয়েটির মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসারে হাল ধরেন। আর্থিক সংকটের কারণে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারেননি। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে মেয়েটি বড়। এর মধ্য হঠাৎ উচ্চ বিত্ত শিক্ষিত পরিবার থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় বিয়ের। খোঁজ খবর বা পরামর্শের সুযোগ না দিয়ে ওই দিনই মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় আবু তাহেরের ভাগ্নে আবদুল জলিল।

তাদের আপ্যায়নের সুযোগও তারা দেয়নি। কাজী নিজেদের ঘরে রয়েছে জানিয়ে ওইদিন আক্দ ও দুইলক্ষ টাকার কাবিননামা সম্পন্ন করেন তারা। এতে অনেকটা সন্দিহান হয়ে পড়ে তারা। বিয়ের পর থেকে মেয়ের শ্বশুড় বাড়িতে কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। এমকি মা বাপের যাওয়া নিষেধ ছিলো। আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিতো না তারা। মেয়েটিকে বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম করাতো আর বাড়ির কাজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতো প্রতিবেশিসহ তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি প্রবাসী আবু তাহেরের আরো দুই স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে।

মেয়েটির মা বলেন, কোনদিন সুখ ও স্বাছন্দের দেখা পাইনি। তাই এতো বড় লোক পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় না করতে পারিনি। দিনের পর দিন তারা আমার মেয়ের যে সর্বনাশ করেছে তা মুখে বলে শেষ করা যাবে না। আমরা গরীব মানুষ, দিনে এনে দিনে খায়। ওরা এতো খারাপ মানুষ বুঝতে পারিনি। মেয়েকে দেখতে গেলে বিভিন্ন রকম হুমকি ও চোর আপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিতে। মেয়ে পড়ালেখা জানে না, তারা যা বলেছে তাই বিশ্বাস করতো। পরবর্তীতে অনেকটা জোর করে মেয়ের সাথে দেখা করলে মেয়ে এ ঘটনা জানায়। এ বিষয়ে তাদের জানালে তারা হুমকি ধমকি ও মামলা দেওয়ার ভয় দিখায়।

তিনি আরো বলেন, বিয়ে করেছে মেয়ের সংসার করবে স্বামীর সাথে এইতো নিয়ম। তবে এ নিয়মের কোনো বালাই ছিলো ওই পরিবারে। নিজের কোনো কক্ষও ছিলো না তার। নামে স্বামী ছিলো আবু তাহের, কয়েকটি পুরোনো কাপড় আর রান্না ঘরই ছিলো মেয়ের সংসার। অল্প বয়সের মেয়ে, লেখাপড়া জানে না। স্বামী শিক্ষিত, বড় লোকের ছেলে। কতো স্বপ্ন দেখেছিলো মেয়েটি। সবই স^প্ন রয়ে গেলো বরং কপালে জুটলো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এসব সয়ে সয়ে মেয়েটি এখন পাগল প্রায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকুবদন্ডী গ্রামের শরীয়ত উল্লাহ ছেলে কাজী আবদুল জলিল (৩৫)। তিনি পেশায় পোপাদিয়া ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্টার ও একটি মসজিদেও খতিব। এছাড়া তাদের টাইলস ও স্যানিটেশনের ব্যবসা রয়েছে।

বোয়ালখালী থানার উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ওবাইদুল ইসলাম বলেন, মেয়ের মায়ের মুখে এ লোমহর্ষক ঘটনা শুনে গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় শ্বশুর বাড়ি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। পরবর্তী মেয়ের স্বীকারোক্তি মতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামী গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।