হোটেলে মিনি পতিতালয় নিয়ে ক্ষোভ

সিলেটের আবাসিক হোটেলে গড়ে ওঠা মিনি পতিতালয় নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই। কয়েক বছর আগে কাস্টঘর-সন্ধ্যা বাজার এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর থেকে ওই এলাকায় ফিরে এসেছে স্বস্তি। এবার তিনি সুরমা মার্কেটের দু’টি আবাসিক হোটেল নিয়ে ক্ষোভ জানালেন। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাফ জানিয়েও দিয়েছেন; অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে তিনি কাউকেই বৈধতার লাইসেন্স দেবেন না। এরপরও সুরমা মার্কেটের বদরুল রেস্টহাউস ও নিউ সুরমা হোটেলে থেমে নেই অসামাজিক কর্মকাণ্ড। কয়েকদিন ধরে এদের বিরুদ্ধে অলআউট অ্যাকশনে নেমেছেন সিলেটের পুলিশ কমিশনার
নিশারুল আরিফ। এখন আর মেট্রো আইনে মামলা নয়, হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনেও মামলা করা হচ্ছে।
এরপরও কাজ হচ্ছে না। যখনই অভিযান চালানো হয় তখনই মিলে অসামাজিক কাজের প্রমাণ। সিলেটে কয়েকটি চিহ্নিত আবাসিক হোটেলকে পরিণত করা হয়েছে মিনি পতিতালয়ে। চিহ্নিত কয়েকজন ব্যক্তির শেল্টারে ও পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা মিলে এই হোটেলগুলোকে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ আস্থানা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশের অভিযানে খদ্দের ও পতিতারা আটক হলেও নিয়ন্ত্রকরা সব সময় রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্র্রতি সময়ে সিলেটের এসব হোটেলের অভিযান শুরু করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সিলেটের পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার রাতে লালদীঘিরপাড়স্থ আবাসিক হোটেল সোনালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি)। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) এডিসি (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে সোনালী আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ১০ নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তাকৃতরা হচ্ছে- জাকির আহমদ, পিন্টু দাস, মো. সাজু মিয়া, নুরু মিয়া, মো. মইনুল হক, শুভ দাস, বৃষ্টি আক্তার, সাথী আক্তার, স্মৃতি ও রুনা আক্তার। এদিকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হোটেলের মালিক তাজু ওরফে কানা তাজুসহ আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, হোটেল সোনালীতে তাজু ওরফে কানা তাজু ও ম্যানেজার নুরু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তরুণী ও যুবতীদের হোটেলে নিয়ে রাখছেন এবং তাদের দিয়ে পতিতাবৃত্তির কাজ করাচ্ছেন। এ ঘটনায় হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারসহ সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। কানা তাজু সিলেট নগরীর পরিচিত হোটেল ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে সে হোটেল ব্যবসার আড়ালে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে কোতোয়ালি থানা ও বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সখ্যতা রয়েছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, কানা তাজুর নেতৃত্বে হোটেলে শুধু অসামাজিক কর্মকাণ্ডই হয় না, এখানে ইয়াবাও বিক্রি করা হয়। অনেক মাদক ব্যবসায়ী সন্ধ্যা হলেই তার হোটেলে ভিড় জমায়। এদিকে টানা ৩ দিন সিলেটের সুরমা মার্কেটের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত দুটি হোটেলে অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরমধ্যে নিউ সুরমা হোটেল থেকে ৯ জন ও বদরুল রেস্টহাউস থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসেই কয়েক বার বদরুল রেস্টহাউস ও নিউ সুরমা হোটেলে অভিযান চালানো হয়। নিউ সুরমার নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন এক জাপা নেতা। তার ম্যানেজার আব্বাসের নেতৃত্বে হোটেলে অসামাজিক কাজ করানো হয়। কোতোয়ালি থানার কয়েকজন কনস্টেবলের সঙ্গে সংখ্যতা গড়ে আব্বাস হোটেলকে মিনি পতিতালয় বানিয়েছে। অভিযান হলেও আব্বাস কখনোই ধরা পড়ে না। এছাড়া বদরুল রেস্টহাউজের ম্যানেজার ফজলুর নিয়ন্ত্রণে অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু ফজলুও গ্রেপ্তার হচ্ছে না।