সিভাসুতে করোনাভাইরাসের ৩০০টি স্পাইক প্রোটিনের জিন সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ  

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)-এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ-এর নেতৃত্বে একদল গবেষক করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জিন সিকোয়েন্সের মিউটেশন নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন। এ গবেষণায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন সময়ের ৩০০ টি নমুনা অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এ কাজটি ঢাকাস্থ ডিএনএ সল্যুয়েশন লি:-এ সম্পন্ন করা হয়। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিলো-ঐ সব নমুনার স্পাইক প্রোটিনের জিন সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মিউটেশন এবং উচ্চ সংক্রমণ করতে সক্ষম এমন করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি kনাক্তকরণ।

গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন-অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক ডাঃ ইফতেখার আহমেদ রানা, বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ডাঃ ত্রিদীপ দাশ, মলিকুলার বায়োলজিস্ট ডাঃ প্রনেশ দত্ত, ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম এবং ডাঃ তানভীর আহমদ নিজামী|

চীনের উহানে সর্বপ্রথম নভেল করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটি বেশ কয়েকবার রূপ পরিবর্তন করেছে এবং এর ফলাফল স্বরুপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়-বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলেও করোনাভাইরাসের ৩টি উল্লেখযোগ্য ভ্যারিয়েন্ট (আলফা, বিটা, ডেল্টা)-এর কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে করোনার উর্ধ্বগতিদেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে এসব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ও মৃত্যু হারের ভিন্নতা দেখা যায়। এমন কি নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতিরও সম্ভাবনা থাকে।

সিভাসু কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবের গবেষকগণ বিগত জুন ২০২০ হতে জুলাই ২০২১ সাল পর্যন্ত উক্ত ল্যাবে পরীক্ষাকৃত নমুনাসমূহের মধ্যে ৩০০ টি কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনার স্পাইক প্রোটিনের সিকোয়েন্সিং এবং এদের মিউটেশন বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় যে, ৬৭ টি নমুনার স্পাইক প্রোটিনের মধ্যে মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে নিউক্লিওটাইডের সিঙ্গেল মিউটেশন হয়েছে ৪৩ টি নমুনায় ও একের অধিক নিউক্লিওটাইডের মিউটেশন হয়েছে ২৪ টি নমুনায়। এসব মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ৪৯ টি বিভিন্ন স্থানে এমাইনো এসিডের পরিবর্তন হয়েছে। তবে বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, এ দ্বারা স্পাইক প্রোটিনের গঠনের উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। এসব মিউটেশনের স্থান ছিলো স্পাইক প্রোটিনের S1 ডোমেইন এবং S1-S2 সাব-ইউনিট লিংকার। উক্ত গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা যায়, এমাইনো এসিডসমূহের মিউটেশনের উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহ হচ্ছে, D614G, D138H, V213L এবং Q506H। উক্ত বিশ্লেষণের আলোকে গবেষকরা দাবি করেন-চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুনভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম এমন কোনো করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি নেই। তবে গবেষক দল ধারণা করেন, বিভিন্ন জিনের বায়োলজিক্যাল মডেলিং দ্বারা করোনাভাইরাসের মিউটেশন সম্পর্কে আরো গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ও মানবদেহের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের
(ACE-2) সংযোগস্থলসমূহ শনাক্তকরণের মাধ্যমে এন্টিভাইরাল ড্রাগ ডিজাইন করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ভাইরাসের প্রোটিনের নির্দিষ্ট এপিটোপ (ভাইরাসের সংরক্ষিত অংশ-যা মানব শরীরে নির্দিষ্ট এন্টিবডির সাথে ক্রিয়া করে) শনাক্তকরণের মাধ্যমে অধিক কার্যকরী ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। উপরন্তু, মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের ক্রমাগত পরিবর্তন ভ্যাকসিন এবং এন্টিভাইরাল ড্রাগের কার্যকারিতায় ও বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। তাই গবেষকরা মনে করেন, নিয়মিত স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন বিশ্লেষণ করে অধিক কার্যকরী ভ্যাকসিন এবং এন্টিভাইরাল ড্রাগ উৎপাদন করা সম্ভব-যা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

গবেষণার উল্লেখযোগ্য ফলাফলঃ

  • নিউক্লিক এসিডের মিউটেশনের কারণে স্পাইক প্রোটিনের গঠনে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি।
  • স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি।
  • স্পাইক প্রোটিনের এ ধরণের মিউটেশন ভ্যাকসিনের কার্যকারীতায় কোন প্রভাব ফেলবে না।