করোনা মোকাবিলায় ঋণ পরিশোধে ঋণগ্রহীতাদের নতুন করে আবারও বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কোনো ঋণগ্রহীতা তাঁর চলতি বছরের ঋণের কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই ওই ঋণকে খেলাপি করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আর কোনো ঋণ খেলাপি হবে না। কারণ, ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত এই সুবিধা নেওয়া যাবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল শুক্রবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের নেতিবাচক প্রভাব প্রলম্বিত হওয়ায় চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা বজায় রাখা এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের গতিধারা স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্য সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তির ২৫ শতাংশ জমা দেওয়ার পর কিস্তির বাকি ৭৫ শতাংশ পরবর্তী এক বছরের মধ্যে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে।
এর আগে ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ঋণ পরিশোধের সীমা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, ঋণ বা ঋণের যেসব কিস্তি ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া হবে, সেসব ঋণ বা ঋণের কিস্তির কমপক্ষে ২০ শতাংশ ৩১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করলে ওই ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে না। তবে ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণ বা ঋণের কিস্তির বকেয়া অংশ সর্বশেষ কিস্তির সঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। তার আগে গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়মিত যেসব ঋণের কিস্তি মার্চ পর্যন্ত বকেয়া ছিল, সেগুলো ৩০ জুনের মধ্যে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিশোধ করলে ওই সব ঋণ খেলাপি করা যেত না।
করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবি করে আসছিল বরাবরই। সম্প্রতি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণ না করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় পুনঃতফসিলীকরণের অনুরোধও জানিয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে এক চিঠির মাধ্যমে এ অনুরোধ জানান বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।
এদিকে, ঋণ খেলাপি না করতে নানা ছাড় দেওয়ার পরও সম্প্রতি খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে হয়েছে ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। তাতে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
করোনা সংক্রমণে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২০২০ সালের পুরো সময় ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও কেউ খেলাপি হননি ওই সময়ে।