নারীর উপর যৌন ও সহিংস আচরণ রুখে দাঁড়াও

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের সমাবেশ অনুষ্ঠিত

“আজ থেকে ২৬ বছর আগে ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের ১৩ বছরের কিশোরী গৃহকর্মী ইয়াসমিনকে টহল পুলিশ ধর্ষণ করে হত্যা করেছিলো। সেই দিন দিনাজপুর বাসীসহ সারাদেশের মানুষ প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলো। রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী আন্দোলন দমন করতে প্রতিবাদী জনতার উপর গুলি চালিয়ে ৭ জন তরুণ- যুবককে খুন করে। এখানে আন্দোলন থামেনি। সম্মিলিত নারী সমাজসহ জনতার আন্দোলন সরকারকে বাধ্য করেছিলো ধর্ষক ও খুনি পুলিশের বিচার করতে। সেই থেকে ইয়াসমিন একটা সংগ্রামের প্রতীক। ২৪ আগষ্ট পালিত হয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে। আজকে নারী সমাজের কাছে সকল প্রকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের, প্রতিরোধের সোচ্চার হওয়ার প্রেরণার দিন।”

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র,চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার আহবায়ক আসমা আক্তারের সভাপতিত্বে আজ ২৪ আগস্ট বিকাল ৪ টায় নগরীর আন্দরকিল্লাহ মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক নাঈমা খালেদ মনিকা,গৃহকর্মী অধিকার রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনজু আরা বেগম,জেলা কমিটির সদস্য দীপা মজুমদার। সভা পরিচালনা করেন জেলা কমিটির সদস্য তোফাতুল জান্নাত।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সারা দেশে চলছে নারী,শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ,গণধর্ষণ,খুনের তান্ডব। ভয়াবহতা বেড়েছে গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর প্রতি যৌন ও সহিংস আচরণ। এসবের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা কেউ এখনও শাস্তির আওতায় আসেনি। নারী দেহ নিয়ে অশ্লীল উপস্থাপনা চলছে নাটক, সিনেমা,বিঞ্জাপনে। নারীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার সমস্ত রাষ্টীয় আয়োজন রয়েছে।
সরকার এখনও তনু, নুসরাত হত্যার বিচার করতে পারেনি। কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার হত্যামামলা থেকে বসুন্ধরার সায়েম সোবহানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।অথচ শুধু নারী হওয়ার কারণে নায়িকা পরিমণীকে বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়াল ও দিনের পর দিন রিমান্ডে চূড়ান্ত হেনস্তা করা হচ্ছে। নির্যাতন, হত্যার নামের তালিকা যত বড় হতে চলেছে তত ছোট হচ্ছে অপরাধীদের শাস্তির নজির।।দলীয় ছত্র ছায়ায় থেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপরাধীরা।
বক্তারা বলেন, এগুলো পুঁজিবাদ সমাজে ভোগবাদী সংস্কৃতির ফলাফল। জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে যখন ব্যবসায়ীদের
টাকায় সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সাধারণ মানুষের সমস্ত রকম গণতান্ত্রিক অধিকার ভেঙ্গে পড়ে। দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করার জন্য আছে মাদক,পর্ণোগ্রাফি,ভিডিও গেইমসহ নানা আয়োজন।সরকারকে এগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।
বক্তাগন অবিলম্বে এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ঘোষণার দাবী জানান।সেই সাথে ঘরে -বাইরে, গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর উপর যৌন ও সহিংস আক্রমণ বন্ধ সহ মাদক -জুয়া- পর্নোগ্রাফি, নাটক – সিনেমা – বিজ্ঞাপনে নারী কে পন্য হিসেবে উপস্থাপন, নারী-শিশু নির্যাতন -হত্যা ও মৌলবাদ -সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর আন্দরকিল্লাহ হতে শুরু হয়ে প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।