ফুলবাড়ির ৫৮ বছরের পুরনো সিনেমা হল ভেঙ্গে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত

দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার সবচেয়ে পুরনো সিনেমা হলের নাম ‘উর্বশী সিনেমা হল’। ১৯৬৩ সালে ফুলবাড়িতে এই সিনেমা হলের যাত্রা শুরু হয়। এরপর কয়েক দফায় এই সিনেমা হলের কারুকাজ, আসন সংখ্যাসহ নানাভাবে সাজানো হয়েছিল। এখন তা ভেঙ্গে নতুন করে আধুনিক সিনেপ্লেক্সের আদলে তা নির্মাণ করা হবে বলে মানবজমিনকে জানালেন সিনেমা হলের মালিক খুরশিদ আলম মতি।
তিনি বলেন, ১৯৬৩ সালে আমার বাবা ফুলবাড়ির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নূরুল হুদা এই সিনেমা হলটি চালুু করেন। তখন আমি অনেক ছোট। সিনেমা হলটি অন্য একটা জায়গায় ছিল। এরপর ১৯৭৪ সালে ফুলবাড়ি সদরের রাস্তাসংলগ্ন এই সিনেমা হলটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে যশোরের মনিহার এবং ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলের ডিজাইনার হানিফ সাহেবকে দিয়ে নতুন ডিজাইনে এই সিনেমা হলটি করা হয়।বাবা মারা যাবার পর থেকে আমি সিনেমা হলটির দায়িত্বে। করোনাকালীন এই কঠিন সময়ে আমরা সিনেমা হলটি বন্ধ রেখেছি এবং সেই সঙ্গে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এই সিনেমা হলটি ভেঙ্গে মার্কেট করা হবে। নীচে শপিং মল এবং উপরে ফুডকোটসহ ১৫০ আসন করে দুটি সিনেপ্লেক্সের মত করে সিনেমা হল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আগের মত ৪০০-৫০০ আসনের সিনেমা হল করে লাভ নেই। বাংলা, হিন্দী, ইংরেজি সব সিনেমা এখন হাতের মুঠোতে মানে মোবাইলে ঘরে বসে দর্শকরা দেখছেন।
নতুন আদলে করলে আগের মত কি সিনেমা হলটিতে দর্শক ভীড় করবেন বলে মনে করছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এজন্য তো ১৪০-১৫০ আসনের উন্নত মানের মাল্টিপ্লেক্স করতে যাচ্ছি। বেশি দর্শকের আশা আমরাও ছেড়ে দিয়েছি এখন। দেশি-বিদেশী সিনেমা চলবে আমাদের নতুন এই মাল্টিপ্লেক্সে। দর্শক কমেনি দর্শকদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। এক ছাদের নিচে একাধিক সিনেমা হল বা স্ক্রিন নিয়ে সারাবিশ্বে সিনেমা ব্যবসা চলছে। আশা করি, আমাদের এখানেও চলবে। আমি সেই পরিকল্পনা মতই এগিয়ে যাচ্ছি। যদিও এত পুরনো হল ভাঙ্গতে গিয়ে কষ্ট হবে তারপরও বিনোদনের খোরাক যোগাতে উর্বশী সিনেমা হল নতুন ভাবে দর্শকের সামনে হাজির হবে খুব শিগগিরই।
দিনাজপুর জেলায় অনেক সিনেমা হল লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে । এতে করে বেকার হয়ে গেছে এ বিভাগের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক-কর্মচারীরা। সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে সেখানে নতুন করে গড়ে উঠেছে মার্কেট, শপিং মল ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের গোডাউন। দিনাজপুর সদর উপজেলাসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ১৯টি সিনেমা হল ছিলো। দিনাজপুর সদরের বস্তান সিনেমা হল ভেঙে গড়ে উঠেছে চাল বাজার, লিলি সিনেমা হল ভেঙে গড়ে উঠেছে বাটা বাজার মার্কেট, ফকিরপাড়া জুয়েল সিনেমা হলের স্থলে আবাসিক বাড়ি, বিডিআর সিনেমা হলে ভেঙে গড়ে উঠেছে বিজিবি অডিটোরিয়াম কমিউনিটি সেন্টার, বন্ধ হয়ে গেছে চৌরঙ্গী সিনেমা হল, একমাত্র চালু রয়েছে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মডার্ন সিনেমা হল। এই সিনেমা হলের অবস্থাও ভাল না। যে কোনো সময় বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বীরগঞ্জ উপজেলায় উল্লাস, কাহারোল উপজেলার উষা, বোচাগঞ্জ উপজেলায় আশা, খানসামা উপজেলায় চামেলি, বিরামপুরে অবসর, হাকিমপুর উপজেলায় হিরামতি ও পার্বতীপুর উপজেলায় আশা টকিজ ও মধুমতি সিনেমা হল রয়েছে বন্ধ।